ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজারে পৌছেছে। গাজা থেকে ফেরার পর ইসরায়েলের হাজার হাজার সেনা নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন আত্মহত্যার পথ। সোমবার (২১ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
এলিরান মিজরাহি, ইসরায়েলের একজন সেনাসদস্য ছিলেন। গত বছর গাজায় লড়াই করতে পাঠানো হয়েছিল তাকে। আহত হলে এলিরানকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা হয়। আহত এলিরানকে বাচানো যায় নি। যুদ্ধের ভয়াবহতায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি। পুনরায় ওই ভয়াবহতার মধ্যে পাঠানোর আগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি।
এলিরানের মা জেনি মিজরাহি বলেন, ‘সে গাজা ছেড়েছিল, তবে গাজা তাকে ছাড়েনি। সেই অবসাদেই আমার ছেলে মারা গেল।’
এলিরানের বোন শির সিএনএনকে বলেন, সে সব সময় বলত, আমি যে কী দেখে এসেছি, তা কেউ বুঝবে না।
গাজায় সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নেই। যতটুকু কাজের সুযোগ রয়েছে তাও ইসরায়েলি বাহিনীর পাহারা ও নজরদারির মধ্যে থেকে করতে হচ্ছে। ফলে ইসরায়েলের হামলায় গাজার ফিলিস্তিনিদের কতটা দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বা সেখানে ইসরায়েলি সেনারা কেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছেন, সে চিত্রটা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
গাজাফেরত ইসরায়েলি সেনারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, গাজায় তারা যে ভয়াবহতা দেখেছেন, তা বাইরের মানুষ সত্যিকার অর্থে কল্পনাও করতে পারবেন না।
গুই জাকেন, এলিরানের বন্ধু। তিনি গাজায় এলিরানের সঙ্গে বুলডোজার চালাতেন। এখন মাংস মুখে নিতে পারেন না তিনি। খাওয়ার সময় গাজায় বুলডোজারের ভেতর থেকে দেখা নানা দৃশ্যের কথা তার মনে পড়ে।
গাজা যুদ্ধ থেকে ফেরা এক–তৃতীয়াংশ ইসরায়েলি সেনাই মানসিক স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। গত আগস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, প্রতি মাসে এক হাজারের বেশি আহত সেনাসদস্যকে চিকিৎসার জন্য ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের ৩৫ শতাংশ নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তবে এই সেনাদের ২৭ শতাংশের অবস্থা উন্নতির দিকে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১৪ হাজার ইসরায়েলি সেনাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ১৪ হাজার ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হবেন।
গাজা থেকে ফেরার পর ইসরায়েলের হাজার হাজার সেনা ‘পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’ (পিটিএসডি) সহ নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তবে তাদের কতজন আত্মহত্যা করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। সূত্র: সিএনএন