গাজীপুরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দর্শনার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ীর দাফন সম্পন্ন
নিউজ ডেস্ক:ঢাকা গাজীপুরে দিন-দুপুরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দর্শনার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী রাজিবুল ইসলাম ওরফে স্বপনের (৩৫) লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। নিহত স্বপন দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের বাসস্ট্যান্ড পাড়ার আলী আহম্মদের ছেলে। গত মঙ্গলবার ঢাকা গাজীপুর করাইতলা ম-লবাড়ির নিকট র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। নিহত হওয়ার খবর শুনে স্বপনের পরিবারের লোকজন লাশ আনতে গাজীপুরে যাওয়ার পর ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল ভোরের দিকে নিহত স্বপনের লাশ নিজ গ্রাম দক্ষিণ চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড পাড়া-সংলগ্ন নিজ বাড়িতে আনা হয়। নিহত স্বপনের লাশ দেখতে গতকাল ভোর থেকেই এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ছুটে আসেন তাঁর বাড়িতে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে দর্শনা বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন কবরস্থান মাঠে জানাজা শেষে তাঁর লাশের দাফন সম্পন্ন হয়।
কে এই রাজিবুল ওরফে স্বপন:
দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ড পাড়ার আলী আহম্মদের ছেলে রাজিবুল ইসলাম ওরফে স্বপন। পিতা আলী আহম্মদের পাঁচ ছেলের মধ্যে স্বপন ছিলেন সেজো ছেলে। মাদক ব্যবসায়ী বলে এক শ্রেণির মানুষ যেমন তাঁকে ঘৃণ করত, তেমনি মিষ্টভাষী ও সদাচরণের জন্য আরেক শ্রেণির মানুষ তাঁকে ভালোও বাসত। অভাব ও শখ থেকেই রাজিবুল মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নিহত স্বপনের লাশ শেষবারের মতো দেখতে এসে লোকজন পরিবারের অভিভাবকদের ওপর দোষ দিতেও ছাড়েননি।
কীভাবে রাজিবুল ওরফে স্বপনের উত্থান:
পিতা আলী আহম্মদের সংসারে কিছুটা দৈন্যতা থাকলেও স্বপন ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন বেশ মনোযোগী। তিনি ২০০০ সালে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। নাবালক ছেড়ে সাবালকের কোটায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের জন্য ও নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। ২০০১ সালের দিকে তিনি টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাদক সেবনকারীদের মাদক কিনে দিতেন। এক সময় ওই টাকার লোভে তিনি নিজেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৫ সালের দিকে তিনি দর্শনা ত্যাগ করেন। এলাকায় এ মাদক ব্যবসায়ী প্রভাব বিস্তার না করলেও ঢাকায় থেকে মাদক ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে। ২০০৮ সালের দিকে ঢাকা থেকে তিনি শুরু করেন মাদকের রমরমা ব্যবসা। সে সময় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব হওয়ার কারণে মাদক ব্যবসার কয়েকটি বড় চালানও আটক হয়। এরপর ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দর্শনা থেকে নিজেই বিভিন্ন কৌশলে ঢাকায় মাদকের বড় বড় চালান নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছিলেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে তাঁর মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটে। বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি মামলায় মাদকসহ আটক হওয়ায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের খাতায় তালিকাভুক্ত হন তিনি। তিনি কয়েকবার জেল খেটে আবারও পুরোনো ব্যসায় জড়িয়ে পড়েন। তবে এ সময়ে মধ্যে তিনি মাদকের ব্যবসা করে মোটা অঙ্কের অর্থের মালিক হন। তিনি ঢাকা মোহাম্মদপুরে বিয়ে করে সেখানেই বাস করতেন এবং মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। অবশেষে গত মঙ্গলবার র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে বড় বড় মাদকের চালনসহ আটক ও ছয়টিরও বেশি মাদকের মামলা ছিল।