নিউজ ডেস্ক:
ঈদ যাত্রায় ট্রেনের আগাম টিকিটও হাওয়া! রাত জেগে দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত টিকিট। নারীদের জন্য পৃথক দুটি কাউন্টার থাকলেও একটি বেশির ভাগ সময়ই ছিল বন্ধ। আর এসি কোচের টিকিট তো সাধারণের নাগালের বাইরে। ভিআইপিসহ বিভিন্ন কোটায় রেখে সাধারণ যাত্রীদের কাছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে—এসি বগি কম, টিকিট শেষ।
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল শুক্রবার সকাল ও দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে টিকিটের জন্য ভিড় করা নারী-পুরুষের কাছ থেকে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কালোবাজারি ছাড়া সুশৃঙ্খলভাবেই টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। চাহিদা বেশি, টিকিট কম। তাই আগত সবাইকে টিকিট দেওয়া যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট পাননি সাখাওয়াত হোসেন বাবুল। তিনি বললেন, ‘খুলনা যাওয়ার সুন্দরবন কিংবা চিত্রা ট্রেনের কোনো টিকিটই পেলাম না।’
গতকাল ছিল আগাম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিন। বিক্রি করা হয়েছে ১৯ আগস্ট ট্রেন যাত্রার টিকিট। ছুটির দিন হওয়ায় ভিড়ও ছিল আগের দিনের চেয়ে বেশি। ঈদের তিন দিন আগে ১৯ আগস্ট ট্রেনে বাড়ি যেতেই বেশি আগ্রহী যাত্রীরা। কিন্তু ১৯ আগস্টের জন্য টিকিট ছিল কম।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গতকাল কমলাপুরে ৩৫টি আন্ত নগর ট্রেনের জন্য ২৬ হাজার ৮৯৫টি টিকিট ছাড়া হয়। এর বিপরীতে চাহিদা ছিল কমপক্ষে ১০ গুণ। টিকিট কিনতে আগতদের ২৫ শতাংশই ছিল নারী। নারী টিকিট প্রত্যাশীদের জন্য ছিল ১৭ ও ১৮ নম্বর কাউন্টার। তবে ১৮ নম্বর কাউন্টার বেশির ভাগ সময় ছিল বন্ধ। ফলে নারীদেরও ভুগতে হয়েছে অপেক্ষার যন্ত্রণায়। কোলে চার বছরের শিশু নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো শৈলী আহমেদ বললেন, ‘চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য চারটি টিকিট নিতে এসেছি। ভোর থেকে পাঁচ ঘণ্টা হলো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। টিকিট পাইনি। কাউন্টার বন্ধ।’
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১৮ নম্বর কাউন্টার বন্ধ ছিল বলে শৈলীর মতো আরো অনেকের ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙে পড়ছিল। ধীরে টিকিট দেওয়া হচ্ছিল ১৭ নম্বর কাউন্টার থেকে। আগের রাত ১০টা থেকে টানা লাইনে দাঁড়িয়ে গতকাল দুপুর ২টায় ক্লান্ত কান্তা রহমান বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললেন, ‘নারীদের জন্য কাউন্টার বাড়ানো দরকার। নইলে এই দুর্ভোগ কমবে না।’
লাইনে সিরিয়াল বিক্রির অভিযোগ ছিল বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে। সব মিলিয়ে ২৬টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। তার মধ্যে বিভিন্ন লাইনে আগেই টাকা দিয়ে লোক দাঁড় করিয়ে সিরিয়াল কিনে রাখা হয়েছে—এমন অভিযোগ করেন সবুজবাগ থেকে আসা আবুল হাসনাত। তবে কমলাপুর রেলস্টেশন ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্ত্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিরিয়াল বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।’ ১৯ আগস্ট রাজশাহী যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন মনজুর হোসেন। গতকাল সকাল ১১টায়ও তিনি টিকিট পাননি। ঢাকা থেকে রাজশাহী রুটে চলাচলকারী পদ্মা ও ধূমকেতু ট্রেনে এসি টিকিট না পেয়ে যাত্রীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯ ও ২০ আগস্টের জন্য ৬০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। গত ৮ আগস্ট শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। ১২ আগস্ট পর্যন্ত তা চলবে। আজ দেওয়া হবে ২০ আগস্ট যাত্রার টিকিট। ট্রেনে প্রতিদিন তিন লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ঈদের সময়ে এক হাজার ৪০২টি কোচ ২২৯টি ইঞ্জিন দিয়ে চলবে।