নিউজ ডেস্ক:
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ সাবলীল এবং নিরাপদে নৌযান চলাচল নিশ্চিত করতে চারটি নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
আজ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে একনেক এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বর্তমান অর্থবছরে একনেকের ৮ম সভায় ‘পুরনো ব্রক্ষপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদ-নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়।
সভা শেষে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, আজকের সভায় আনুমানিক ১৩ হাজার ২১৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৮ হাজার ৪৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং সংস্থাগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দিবে। অন্যদিকে, অবশিষ্ট ৪ হাজার ২৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসাবে পাওয়া যাবে।’
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে চারটি নদ-নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্প এলাকাসমূহ হচ্ছে- রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা, ঢাকা বিভাগর কিশোরগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলা।
যাত্রী ও মালামাল সহজ ও সাবলীলভাবে এবং কম খরচে পরিবহনের লক্ষ্যে এই প্রকল্পের আওতায় পুরনো ব্রক্ষপুত্র নদকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথে উন্নীত করতে ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাকে ১০০ মিটার চওড়া এবং ৩ মিটার গভীর করে খনন করা হবে।
পাশাপাশি, ধরলা নদীকে তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথে উন্নীত করার লক্ষ্যে নদীটির ৬০ মিটার এলাকা ৩৬ মিটার চওড়া ও ২ মিটার গভীর করে খনন করা হবে।
এছাড়াও প্রয়োজনীয় খননের মাধ্যমে পুনর্ভবা নদীটিকে তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথে এবং তুলাই নদীটিকে চতুর্থ শ্রেণীর নৌপথে রূপান্তর করা হবে।
সভায় অনুমোদিত ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১০টি নতুন এবং ৫টি সংশোধিত প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় বলেন, কক্সবাজার বিমান বন্দর এমন ভাবে উন্নয়ন করা হবে, যেন বোয়িং ৭৭৭ অথবা এয়ার বাস ৩৪০ এর মতো বিশাল আকৃতির বিমান সহজেই উঠা নামা করতে পারে। তিনি বলেন, সবদিক থেকেই এই বিমান বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকে ১,২৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার স্কুল শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বন্ধে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এ প্রকল্পের অধিনে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শিশুদের তাদের নিজস্ব ভাষায় অথবা ইংরেজি ভাষায় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
বৈঠকে অনুমোদিত অপর প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ৩৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে হাটহাজারি-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি সড়কের চট্টগ্রামের অংশের উন্নয়ন, ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভুরুঙ্গামারি-সোনাহাট স্থলবন্দর-ভিতরবন্দর-নাগেশ্বরী মহাসড়কের দুধকুমর নদীর ওপর সোনাহাট সেতু নির্মাণ প্রকল্প, ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ চ্যানন্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, ১০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে গুঁড়ো দুধের কারখানা স্থাপন প্রকল্প।
বৈঠকে অনুমোদিত বাকি প্রকল্পগুলো হলো, ২৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সাসটেইনেবল কোস্টাল ও মেরিন ফিসারিজ প্রকল্প, ৩৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন রক্ষায় তীর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, ১৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি ও হাটহাজারি উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ, ১৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনিষ্টিটিউট নির্মাণ, ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের উন্নয়ন প্রকল্প, ১,৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্প।