নিউজ ডেস্ক:
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বেপারীপাড়া গ্রামের ওমর আলীর ছেলে আব্দুর রহিম ২০০৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক আছেন প্রায় ১০ বছর। এ পর্যন্ত ১১৬ বার তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
তার বিচার আজও শুরু হয়নি। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তার পক্ষে জামিনের আবেদন করার সঙ্গতি নেই স্বজনদের। রংপুর নগরীর খামারপাড়া গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন।তিনি ২০০৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে জেলহাজতে।
৮ বছর ধরে তিনি কারাগারে আটক আছেন। এই ৮ বছরে ৮৮ বার তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার মামলার বিচার শুরুই হয়নি। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ভুষিরবন্দর গ্রামের জহর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম ২০০৭ সালের ১২ অক্টোবর থেকে দিনাজপুর কারাগারে আটক আছেন। ১০ বছরে তাকে ৪১ বার আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার মামলার বিচারও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি।
নাজমুল, খায়রুল ও রহিমের মত রংপুর বিভাগের ছয় জেলার কারাগারে ৩৬ জন বন্দি দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে আটক আছেন। তাদের কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেওয়া হলেও এদের কারও মামলার বিচার শুরু হয়নি। বারবার মামলার তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে।
একদিকে তারা বিনা বিচারে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ধুঁকছেন, অন্যদিকে তাদের পরিবার বিচারের আশায় আদালত আর কারাগারে ধরনা দিতে দিতে হতাশ হয়ে পড়েছে। এসব তথ্য জানা গেছে রংপুরে অবস্থিত ডিআইজি প্রিজন কার্যালয়ের একটি সূত্র থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই বিভাগে বিনা বিচারে আটক ৩৬ বন্দির মধ্যে রংপুর কারাগারে আটক আছেন চারজন, গাইবান্ধা কারাগারে দুইজন, কুড়িগ্রামে চারজন, নীলফামারী কারাগারে ১২ জন, দিনাজপুর কারাগারে নয়জন এবং ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে আটক রয়েছে পাঁচজন।
রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি অ্যাড. আবদুল জলিল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন বিনা বিচারে আটক বন্দিরা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি ইতিমধ্যেই বিনা বিচারে আটক বন্দিদের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন কারাগারে আটক বন্দিদের মুক্তির দাবি জানান।
রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার রত্না রায় জানান, জেলখানায় বিনা বিচারে আটক এটি বলা যাবে না। কারণ আমরা বন্দিদের নিয়মিত আদালতে হাজিরার জন্য পাঠাই। বিচারের বিষয়টি আদালতের। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।