নিউজ ডেস্ক:হেমন্ত তার শিশির ভেজা/আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়, চুপে চুপে রং মাখাল/আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়। ’ কবি সুফিয়া কামালের লেখা ‘হেমন্ত’ কবিতায় বাংলার হেমন্তের রূপ ধরা দিয়েছে নিবিড়ভাবে।
নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিনের বৃষ্টি উসকে দিল প্রকৃতিকে। ফলে সে জানান দিতে শুরু করেছে শীত আসছে! এরইমধ্যে বিদায় নিয়েছে দেবী দুর্গা।চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি মাঠে চোখ মেললেই দেখা যায় ঘাস ও ধানের কচি ডগায় জমছে শিশির বিন্দু। সেই সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে হিম হাওয়া। যেন হেমন্ত তার প্রকৃতির সবটুকু উজাড় করে বিলিয়ে দিচ্ছে।
লেখক ও কবি কাজল মাহমুদের মতে, এটা ঠিক, ঋতুবৈচিত্র্যের অনিবার্য প্রভাবে বাংলায় শীত আসবেই। তবে বাঙালির জীবনে শীতের আগমন অবিমিশ্র অনুভূতি নিয়ে আসে। ঠিক বসন্ত বা শরতের মতো আমরা তাকে আবাহন করি না। শীতে বাংলার রূপ বদলায় নিজস্ব রীতিতে। হেমবরণী হেমন্ত হিমেল হাওয়ায় উপস্থাপন করে শীতের নাচন। তার আগমনীকে মধুর আমেজের সূর্যরশ্মির সঙ্গে মিলিয়ে দেয় সকালের সোনারোদ। কুয়াশা নামের প্রাকৃতিক চাদরে ঢাকা পড়ে চরাচর। বাজারে নতুন নতুন শাকসবজি, সাতসকালে খেজুর রস, গৃহিণীর ডালের বড়ি দেওয়ার তোড়জোড়, রাস্তার ধারে পিঠা বিক্রি। এ সবকিছুই শহরের শীতকালকেই উপস্থাপন করে।
শীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার আবহমান সাংস্কৃতিক চর্চাও। শীত মানেই যেন উৎসব! কবিগান, জারিগান, পুতুলনাচ, সার্কাস, যাত্রাপালা, নাট্যমেলা আরও কত কী! সবগুলোরই আসর যেন পূর্ণতা পায় শীতের রাতে। মাঘীপূর্ণিমার উল্লাস সেও তো হিম সমীরণ থেকে বেরিয়ে আসা অনবদ্য নিসর্গের চিত্রপট। এতসব রূপকল্পের মাঝেও শিশির বিন্দুর নিঃশব্দ পতনের মতো প্রত্যাশা পৌষমাসে কারো যেন সর্বনাশ না হয়।
এবছর শীতে রয়েছে আতঙ্ক-আশঙ্কা। কেননা বর্তমানে করোনা ভাইরাস কিছুটা স্বস্তিতে রাখলেও শীতে তার বিস্তার ঘটতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই সবার প্রত্যাশা, শীত যেন ম্লান না করে শীতের বৈচিত্র্য।