মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা; গরম বাড়বে আরো : চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড
নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গায় অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। সারাদেশে দাবদাহ ছড়িয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের অবিরাম দহনে জনজীবনে অস্বস্তি বেড়েই চলেছে। এমনকি রাতের বেলায়ও স্বস্তি মিলছে না। ভ্যাপসা ও গুমোট গরমে অস্থির মানুষজন। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে সাথে সর্বনি¤œ তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। এতেই গরমের তীব্রতা বেশি। গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুব সহসা খরতাপ কমবে আবহাওয়া পূর্বাভাসে এমন আশার কথা আপাতত নেই। এদিকে গত শনিবার ও গতকাল সোমবার ভ্যাপসা গরমে ডাইরিয়ায় আক্রান্তে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে।
অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে চুয়াডাঙ্গার জনজীবনসহ প্রাণীকুল অতিষ্ঠ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে সর্দিজ্বর ও পেটের পীড়া। অসহনীয় গরমে শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষের বড় কষ্ট হচ্ছে। তীব্র গরমে এদের জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। হাসপাতালে প্রচন্ড ভীড়। ঈদের ছুটি থাকার কারনে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক থাকায়রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তারদের।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, শীতের মৌসুম শেষে এত গরম পড়েনি আর। এই তাপমাত্রা আগামী দুই এক দিনে আরো বাড়তে পারে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, এবার গরমের মৌসুমে সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
এদিকে, ভ্যাপসা গরমে দেদারছে ঘামছে শরীর। ভিজে যাচ্ছে পরনের পোশাক আশাক। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হৃদরোগসহ নানা রোগ। শিশু ও বৃদ্ধরা ব্যাপক হারে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর অস্বাভাবিক চাপ। ভ্যাপসা গরমে ডাইরিয়ায় আক্রান্তে গত শনিবার ও গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির পর দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত তিন দিনে সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ৮৪ জন নারী-পুরুষ ভর্তি হয়েছে। এছাড়া আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে অসংখ্য নারীপুরুষ। চিকিৎসকদের অনেকেই বলেছেন, ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ-পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া গরমের কারণে অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে অতিরিক্ত গরমের কারণে তাদের তা বেড়ে অসহনীয় হয়ে উঠছে। ফলে হাসপাতালে রোগীর চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
ঈদের ছুটিতে সীমিত সেবিকা না থাকায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও কর্তব্যরত নার্সরা। প্রচন্ড গরমে হাসপাতালের ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে মেঝেতে শিশুদেরকে নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। হাসপাতালে তিল পরিমাণও ঠাই নাই। এমনকি ছোট বাচ্চাকে নিয়ে মেঝেতে শুয়ে থাকতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পরিতোষ কুমার ঘোষ মাত্রারিক্ত গরমে বেশি বেশি করে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে স্যালাইন খাওয়া দরকার। তা ছাড়া খাবার গ্রহণেও বাড়তি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বাসিপচা খাবার ত্যাগের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ঘাম শরীরে বসার সুযোগ না দিয়ে ঘন ঘন মুছে ফেলা ভালো। ঘামগায়ে ঠা-া পানি পরিহার করতে হবে। মাত্রারিক্ত ঘামের কারণে শরীরে যাতে পানিশূন্যতা না হয়ে পড়ে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঘামতে ঘামতে হঠাৎ ঘামা বন্ধ হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু হাসান মো. ওয়াহেদ রানা জানান, ডায়রিয়ার আভাস পেলে প্রথমই কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ঘনঘন খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে, যা শরীরের পানি শূন্যতার অভাব পূরণ করবে। বেশি বেশি করে তরল খাবার যেমন ভাতের মাড়, চিড়ার পানি ও ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। তিনি আরো জানান, কলেরা স্যালাইন খাওয়ালে শরীরের লবণ ও পানির যে ঘাটতি তৈরি হয় সেটা কমে যাবে। আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ টিউবওয়েলের পানি খাওয়াতে হবে। টিউবওয়ালের পানি পাওয়া না গেলে পুকুর বা নদীর পানি চুলায় দিয়ে বুদবুদ ওঠা থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে। শিশু’র ক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। অল্প অল্প করে বার বার খাওয়াতে হবে। যে সব শিশু মায়ের বুকের দুধ খায়, তাদের ঘনঘন মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ মোতাবেক জিঙ্ক খাওয়াতে হবে। ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিবার পায়খানার পর ১০-২০ চা চামচ পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে ও ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২০-৪০ চা চামচ পরিমান স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে। খাবার তৈরীর আগে রোগীকে খাওয়াবার পূর্বে ও পায়খানার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। এছাড়া সব সময় সিদ্ধ ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে বোতলের দুধ খাওয়ানোর থেকে বিরত থাকতে হবে। জলাবদ্ধ পায়খানা ব্যবহার করতে হবে। শিশুকে অবশ্যই হামের টিকা দিতে হবে।