নিউজ ডেস্ক:
জীবনে কখনও কখনও এমন ঘটনাও ঘটে যাকে অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়। ৪৭ বছর আগে হারানো আংটি ফেরত পাওয়ার একটি ঘটনা তেমনই।
সান ফ্রান্সিসকোর বাসিন্দা জিম ওয়ার্থ নিজের ফেসবুক ওয়ালে সেই ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন।
১৯৭০ সালে ম্যাসাচুসেটসের কেপ গড সমুদ্র সৈকতে বেড়াচ্ছিলেন এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি। সেটা ছিল তাদের মধুচন্দ্রিমার সময়। সে সময়ই আচমকা প্যাট্রিক ও’হাগান নামের ব্যক্তিটির আঙুল থেকে সমুদ্রের পানিতে পড়ে যায় একটি আংটি। এই আংটি ছিল ১৯৬৯ সালের এক ‘ক্লাস রিং’। ক্লাস রিং হল হাই স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আঙুলে পরিহিত আংটি, যা আসলে বিদ্যায়তনের স্মৃতিরক্ষার্থে তারা আঙুলে পরেন।
আংটি পাওয়ার পরের বছরই মধুচন্দ্রিমার সময়ে সেটি হারিয়ে ফেলার পরে কতটা মন খারাপ হয়েছিল প্যাট্রিকের তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খুব খারাপ লেগেছিল প্যাট্রিকের সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী ক্রিস্টিনেরও।
তারপর আস্তে আস্তে ৪৭ বছর পেরিয়ে গেছে সেদিনের সেই ঘটনার পর। আচমকাই এই ২০১৭-এর মধ্য পর্বে একদিন ফোন বেজে ওঠে তাদের বাড়ির। ফোনের ওপারের কণ্ঠ জানায়, তিনি খুঁজে পেয়েছেন সেই কবেকার হারিয়ে যাওয়া আংটি!
স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি ক্রিস্টিনের। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলতে থাকেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছেন!’
এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ফোনটির ব্যাপারে বলতে গিয়ে আবেগে ভেসে গিয়ে ক্রিস্টিন জানান, ‘আমি চিরকাল এটা খুঁজে এসেছি। ওটা যে আমাদের দাম্পত্যের সেই প্রথম দিনগুলোর এক স্মারক!’
কিন্তু কেমন করে ওই আংটি পেলেন জিম ওয়ার্থ! তার চেয়েও বড় কথা তিনি কী ভাবে খুঁজে পেলেন আংটির আসল মালিককে। সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন তার ফেসবুক পোস্টে। একটি মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সমুদ্রতটে তল্লাশি কাজ করার সময় আচমকাই তিনি বালি আর পাথরের আড়াল থেকে সন্ধান পান আংটিটির। স্বাভাবিকভাবেই এতদিন ওখানে পড়ে থেকে শ্যাওলা মেখে সেটি বিবর্ণ হয়ে পড়েছিল।
পরিষ্কার করার পরে জিম দেখতে পান সেটি ১৯৬৯ সালের ম্যানহাটন কলেজের কলেজ রিং। সেখানে প্যাট্রিকের পুরো নামও লেখা ছিল।
সেই নাম দিয়ে গুগলে সার্চ করতে থাকেন জিম। খুঁজে পান ক্রিস্টিনের লেখা স্মৃতিকথা। সেখানে ম্যানহাটন কলেজের কলেজ পড়ুয়া প্যাট্রিকের সঙ্গে নিবিড় প্রেমের কথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন ক্রিস্টিন। সময়কাল, কলেজের নাম, ছাত্রের নাম— সবকিছু মিলে যাওয়ায় জিমের বুঝতে দেরি হয়নি তিনি একেবারে সঠিক লোককে খুঁজে পেয়েছেন।
এই আংটি প্যাট্রিক ও ক্রিস্টিনের কাছে কেবল আংটি মাত্র নয়। তা আসলে সময়ের বুক ছেঁচে তৈরি করা এক কালখণ্ড। সেটাকে সমুদ্রের নীল জলে হারিয়ে ফেলার এত বছর পরে সম্পূর্ণ অচেনা এক ব্যক্তির দৌলতে ফিরে পাওয়াটা তাই লেখকের কল্পনাকেও চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো।