নিউজ ডেস্ক:
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারই নয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও স্বাধীনতাকে হত্যার চক্রান্তেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড পরিচালিত হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘’যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, খন্দকার মোশতাকসহ সেই সব বর্ণচোরা ষড়যন্ত্রকারীরা এই নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।’
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা শ্রমিক লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
মন্ত্রী এ সময় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শহীদ জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হওয়া শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে একটি অগ্রগতির উদাহরণ হয়ে উঠতো, এশিয়ায় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার আগে মানুষ বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনতো, কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি’ উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
ড. হাছান বলেন, স্বাধীনতার পর তিন কোটি গৃহ হারা মানুষের একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে তুলে দাঁড় করিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪ শতাংশ, যা আমরা চার দশক পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ সালে অতিক্রম করতে পেরেছি। সদ্য স্বাধীন দেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সূচক পূর্ণ করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ এখনো তা হতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ১৯৭৫ সালে দেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছিল, পরিসংখ্যান মতে সে বছর দেশে ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছিল।
ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যাতে হত্যার বিচার না হয় সে জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দেয়া হয়েছিল, জিয়া সেটাকে ১৯৭৯ সালে আইনে পরিণত করেন। একইভাবে ২০০২ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করে প্রায় একশ’ মানুষ হত্যা করে তার বিচার বন্ধেও ইনডেমনিটি দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে পাকিস্তানি ভাবধারা তৈরি করা হয়েছিল। পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার, জাতীয় পতাকা ও সংগীত পরিবর্তন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তানের আদলে রেডিও বাংলাদেশ করা হয়েছিল।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্তস্রোত যার ধমনীতে প্রবহমান, সেই জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশকে অদম্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।’
নারী উন্নয়ন বিষয়ে এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে নারী অগ্রগতিতে অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। দেশে আজ নারীরা বিচারপতি, সচিব, জেনারেল হয়েছেন, যা আগে কেউ ভাবেনি। শেখ হাসিনাই সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মায়ের নাম উল্লেখ বাধ্যতামূলক করেছেন। কারণ একজন মা কখনো সন্তানকে ছেড়ে যান না। অপরদিকে, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে নিজের ও নিজের বেশভূষার উন্নয়ন ঘটালেও নারী উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।’
মহিলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সুরাইয়া আক্তারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথীর সঞ্চালনায় সভায় ১৫ আগস্টের শহীদদের ওপর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি শামসুন নাহার এমপি।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খানের জানাযায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়াও এ দিন বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ড. হাছান মাহমুদ দেশের শত্রুদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে দেশ ও প্রগতির শত্রুরা তাকে হত্যা করে। এখনো বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ও অদম্য গতিতে উন্নয়নকে যারা সহ্য করতে পারে না, তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশ ও উন্নয়নের এই শত্রুদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আহমেদ হাসনাইনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক রূপম বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আয়োজিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাশেম, সাবিনা আক্তার তুহিন, মহিলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া বেগম, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান হিরণ এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন যথাক্রমে প্রধান ও বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।