নিউজ ডেস্ক:
প্রত্যাশামতোই ভারতের গুজরাটে নিজেদের শাসন ক্ষমতা ধরে রাখল বিজেপি। পাশাপাশি হিমাচল প্রদেশেও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিল গেরুয়া শিবির।
১৮২ আসনের গুজরাট বিধানসভায় সরকার গড়তে দরকার ৯২ টি আসন। সেখানে ৯৮ আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি (৪৯ শতাংশ)। কংগ্রেসের ঝুলিতে গেছে ৮১ টি আসন (৪৩ শতাংশ)। অন্যান্যরা পেয়েছে ৩ টি আসন।
তবে ২০১২ সালের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা খারাপ ফল করেছে বিজেপি। সেবার ১১৫ আসনে জয় পেয়ে ক্ষমতায় আসে গেরুয়া দলটি। কংগ্রেস পেয়েছিল ৬১ টি আসন। পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যটিতে গত ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এই জয়ের ফলে আগামী পাঁচ বছর রাজ্যটিতে শাসন ক্ষমতার দায়িত্ব পেল বিজেপি।
যদিও সোমবার সকাল থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা ছিল এই ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এদিন সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয় গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভার ভোট গণনা। গুজরাটে প্রথম দেড় ঘণ্টা বিজেপি’এর এগিয়ে থাকার খবর থাকলেও হঠাৎ করেই বিজেপিকে পেছনে ফেলে কংগ্রেস এগিয়ে যেতে থাকে। এমনকি রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি ও উপমুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল তাদের নিজেদের কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে পিছিয়ে পড়ে। এরপরই বিজেপির জয় নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
বিজেপির পিছিয়ে থাকার খবরে দেশটির শেয়ার বাজারেও সাময়িক ধস নামে। বিজেপির পিছিয়ে থাকার খবরে কংগ্রেস শিবিরও রীতিমতো আতশবাজি ফাটিয়ে আগাম উৎসব শুরু করে দেয়। এই সময়ে কার্যত গৃহবন্দী ছিল গেরুয়া শিবিরের লোকজনেরা। কিন্তু বেলা বাড়তেই মোদি ম্যাজিকের ইঙ্গিত লক্ষ্য করা যায়। বিজেপি সুবিধাজনক স্থানে ফেরার সাথেই শেয়ার বাজারও নতুন করে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। অবশেষে সব আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে জয় আসে গেরুয়া শিবিরে। এরপরই দিল্লির পাশাপাশি গুজরাট ও দেশের অন্যরাজ্যগুলিতেও বিজেপি কর্মীরা উৎসবে মেতে ওঠেন।
কলকাতায় বিজেপির কার্যালয়েও দলের নারী নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি উৎসবে মেতে ওঠেন, এবং কর্মী-সমর্থকদের মিষ্টি মুখ করান। জয়ের আভাস পেয়ে এদিন সকালে সংসদে প্রবেশের মুখে দুই আঙুল তুলে ‘ভি’ সাইন দেখান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-ও।
গুজরাটে জয়ী হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। তিনি রাজকোট পশ্চিম কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রনীল রাজগুরু’কে পরাজিত করেছেন। এছাড়াও মেহসানা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন উপ মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি’র নিতীন প্যাটেল। যদিও একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী দুই হেভিওয়েট প্রার্থীই তাদের বিপক্ষ প্রার্থীর থেকে পিছিয়ে ছিলেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিগ্নেশ মেভানি, কংগ্রেস প্রার্থী অল্পেশ ঠাকোর, পরেশ ধান্নাই, বিজেপি প্রার্থী জিতু ভাগানি, ভুপন্দ্র সিং, প্রদীপ সিং জাদেজা নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছেন। আর পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে আছেন কংগ্রেসের শক্তিশিং গোহিল, সিদ্ধার্থ প্যাটেল, বিজেপির জয়নারায়ণ ব্যাস।
অন্যদিকে গুজরাটের মতো হিমাচল প্রদেশেও জয় পেয়েছে বিজেপি। এবার তারা শাসক দল কংগ্রেসকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছে। ৬৮ আসনের হিমাচল প্রদেশে ক্ষমতা দখলের জন্য ম্যাজিক ফিগার ৩৫। সেখানে ৪৪ আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। কংগ্রেসের ঝুলিতে গেছে মাত্র ২০ টি আসন, অন্যান্যরা পেয়েছে ৪ টি আসন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বিধানসভার নির্বাচনেই এই রাজ্যটিতে সরকার বদলের রীতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে চলতি নির্বাচনেও বিজেপি-ই যে সরকার গঠন করতে চলেছে-তার আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। তাছাড়া কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিং’এর হিমাচলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া কাজ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বিরুদ্ধেই অর্থ তছরুপির অভিযোগ ছিল, পাশাপাশি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও কংগ্রেস শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষের একটা ক্ষোভ ছিল।