নিউজ ডেস্ক:চাকরি হারানোর ক্ষোভেই আলমডাঙ্গার ভোগাইল-বগাদী গ্রামের ট্রাকচালক ও তাঁর বন্ধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন ট্রাকটির চাকরিচ্যুত চালক ও তাঁর সহকারী। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল শনিবার ভোরে সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই চাকরিচ্যুত চালক, তাঁর সহকারীসহ মোট তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক দুই ব্যক্তি হলেন সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল মুড়ারগাঁও এলাকার ফৌজদার মিয়া তালুকদারের ছেলে ট্রাক চালক মো. ইব্রাহিম মিয়া তালুকদার ও বিশ্বনাথের শ্বাসরাম এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে ট্রাকের হেলপার ফজর মিয়া। এ ছাড়াও এ ঘটনায় সহযোগিতার দায়ে ট্রাকের টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ট্রাক ড্রাইভার ও তাঁর সহকারী হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
নিহত দুই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইদ-বাগাদী গ্রামের কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ ট্রাকের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে জাহাঙ্গীর চুয়াডাঙ্গা সদর থানা এলাকার আন্দিপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ট্রাকে ড্রাইভার হিসেবে নতুন চাকুরিতে যোগদান করেন। ট্রাকটি সিলেট থেকে নিয়ে আসার জন্য ট্রাক মালিক আতাউর তাঁর নতুন ড্রাইভার জাহাঙ্গীরকে পাঠান। এ সময় জাহাঙ্গীর বাড়ির পাশের বন্ধু রাজুকে সঙ্গে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। ট্রাকটি ঢাকা-টঙ্গী এলাকার মাইওয়ান রেলগেটের নিকট পাথর আনলোড করা হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে ট্রাকটি আনার জন্য জাহাঙ্গীর ও রাজু ঢাকা মাইওয়ান এলাকায় গিয়ে চাকরিচুত ড্রাইভার ইব্রাহিম ও তাঁর সহকারী ফরজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা গত বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাক নিয়ে আসতে চাইলে হত্যাকারীরা সিলেট থেকে ট্রাক বুঝিয়ে দেবেন বলে তাঁদের জানান এবং সিলেট থেকে ঢাকায় পাথর নিয়ে আসা বাবদ ২০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়ার কথা ট্রাক মালিককে জানান, যা আসলে ৩০ হাজার টাকায় মেটানো হয়। অতিরিক্ত এ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জাহাঙ্গীর ট্রাক মালিক আতাউরকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান। এ নিয়ে মোবাইলে আতাউরের সঙ্গে ট্রাক ড্রাইভার ইব্রাহিমের তর্ক-বিতর্ক হয়। এরপরই চাকরিচ্যুতর ক্ষোভে নতুন ট্রাক ড্রাইভার জাহাঙ্গীর ও তাঁর বন্ধু রাজুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন চাকরিচুত ড্রাইভার ইব্রাহিম ও তাঁর সহকারী ফরজ।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় টঙ্গী এলাকার গাজীপুর থেকে ওই ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় জাহাঙ্গীর ও তাঁর বন্ধু রাজুর সফর সঙ্গী হন সাবেক চালক ইব্রাহিম ও সহকারী ফরজ। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর গাড়ি চালান ইব্রাহিম। পরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় নিয়ে ট্রাকটি রাখা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুর্ঘটনার নাটক সাজাতে ট্রাকের ছয়টি চাকাও খুলে নেন তাঁরা। ট্রাকের যে চাকাগুলো খুলে বিক্রি করা হয়েছিল, সেগুলোও উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো ঘটনায় দুজনকে সহযোগিতা করেছেন ট্রাকের টায়ার ক্রেতা জয়নাল মিয়া। জগদীশপুরে এই জয়নালের দোকানেই চাকাগুলো বিক্রি করেছিলেন তাঁরা।
পুলিশ জানায়, ঘাতকেরা ‘দুঘটনা কবলিত’র নাটক সাজালেও শুরুতেই পুলিশের কাছে এটি হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করল। পুলিশ আরও জানায়, নিহতদের ব্যবহৃত মোবাইল সেট ফজরের শ্বশুরবাড়ি এবং ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ট্রাকের ৩টি চাকা ও ৫টি রিং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও আটক করেছে পুলিশ।
সিলেট মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন আহমদ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের আজ (গতকাল) বিকেলে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আন্দিপুরের আতাউর রহমান। আটক ইব্রাহিম ওই ট্রাকটির চালক ও ফজর হেলপার ছিলেন। গত মঙ্গলবার ট্রাকটি তাঁরা ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে চাকরি দেন ট্রাক মালিক। জাহাঙ্গীরের বন্ধু ছিলেন রাজু। চাকরি হারানোর ক্ষোভ থেকেই জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তাঁরা।