নিউজ ডেস্ক:
সাম্প্রদায়িকতাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় না দিয়ে কঠোরভাবে দমনের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।
তিনি বলেন, এই সময়ে যদি সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে এটা যেভাবে দানা বাঁধবে তাতে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের উচিত সাম্প্রদায়িকতাকে অবিলম্বে কঠোর হাতে দমন করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
শনিবার (২০ মার্চ) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, আজ যে সাম্প্রদায়িকতার প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করি, যখনই কোনো শুভ কাজ, যখনই বাংলাদেশে অগ্রগতি বা অগ্রযাত্রা বা বাঙালি জাতির রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা, তখনই সেটাকে ব্যাহত করার জন্য পাকিস্তান আমলে যেমন সাম্প্রদায়িকতাকে অস্ত্র বানাত হতো, আমাদের দেশেও কিন্তু সেই একই প্রবণতা।
বঙ্গবন্ধু জন্মশতবাষির্কী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের বাংলাদশে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে আমু বলেন, বিদেশি অতিথিদের আগমন, বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে যেটা হচ্ছে, এটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত। কারণ মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারত কী? ভারত হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্রধান সহায়ক শক্তি। ভারত সরকার, ভারতের জনগণ, দলমত নির্বিশেষে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সমর্থন দিয়েছিল, আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের নিজেদের খাদ্য ভাগ করে আমাদের খাইয়েছিল।
‘তাই আজ যখন আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব, সেই ভারতের প্রতিনিধি থাকবে না— এটা হতে পারে না। যে অপশক্তি ১৫ আগস্ট সংঘটিত করেছে, যেই অপশক্তি একাত্তরের সংঘটিত করেছে, সেই অপশক্তির কাজই হচ্ছে ভারতের বিরোধিতা করা। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়ক বন্ধু ও মিত্র। সেই মিত্রদের সঙ্গে শত্রুতা করাই যাদের উদ্দেশ্য; পাকিস্তানের দালাল, আইএসের দালাল হিসেবে তারাই সাম্প্রদায়িকতাকে উসকানি শুধু নয়, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। তারা ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে,’— বলেন আমির হোসেন আমু।
এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত মত দিয়ে তিনি বলেন, এই সাম্প্রদায়িকতাকে কিছুতেই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। এই সময়ে যদি আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেই, তাহলে এটা যেভাবে দানা বাঁধবে, নিশ্চয়ই এটা বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক যে অগ্রযাত্রা— এটা সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের উচিত সাম্প্রদায়িকতা অবিলম্বে কঠোর হাতে দমন করা এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ নেওয়া।
সরকারকে শক্তহাতে মোদিবিরোধী অপতৎপরতা মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমু বলেন, সরকারের আমন্ত্রণে তিনি আসছেন। কাজেই সরকারের দায়িত্ব হবে এটাকে রক্ষা করা। আজ বঙ্গন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান যেটা সীমিত আকারে উদযাপন হচ্ছে, সেটা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, দেশের ভাবমূর্তি যেন কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন, অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ ও দেশপ্রেম সঠিকভাবে জাতীয় জীবনে প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলেন (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রাজাকারদের ধারা চিরতরে বর্জন ও ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত করতে হবে।
জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও দেশপ্রেম তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে তাদের দেশপ্রেমক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাদঁপুরী, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা।