নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর বনানীতে দ্য রেইন ট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাফাত আহমেদ এবং সাদমান সাকিফের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সাফাত আহমেদের ৬ দিন এবং সাদমান সাকিফের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম রায়হান-উল-ইসলামের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের কথা বলে বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে দুই ছাত্রীকে নিয়ে যায় আসামিরা। পরে আসামি সাফাত আহমেদ ও তার সঙ্গে থাকা এজাহার নামীয় অন্যান্য আসামি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দুই ছাত্রীকে বিভ্রান্ত করে কক্ষে আটকে রাখে। এরপর আসামিরা দুই ছাত্রীকে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করে।
রিমান্ড আবেদনে আরো বলা হয়, আসামিরা দুশ্চরিত্রের লোক। তারা ইতিপূর্বে একইভাবে সরলমনা অনেক মেয়েকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, এজাহার নামীয় অপরাপর পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং অন্যান্য পলাতক আসামির নাম-ঠিকানা সংগ্রহের জন্য আসামিদের দশ দিনের রিমান্ডের প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, শাহ আলম তালুকদার রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা চাই এরকম ঘটনা যেন সমাজে আর না ঘটে। এদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত অপরাধীদের বের করা সম্ভব হবে। এজন্য তাদের দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
রাজধানী মানবাধিকার সংস্থার পক্ষে সৈয়দ নাজমুল হুদা বলেন, এরা সভ্য সমাজের অসভ্য লোক। এদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তাই তাদের দশ রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
অপরদিকে আসামি সাফাত আহমেদের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, মোস্তফা সারোয়ার মুরাদ রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। তারা বলেন, এটি একটি মিথ্যা মামলা। সাজানো মামলা। এজাহারে ঘটনা উল্লেখ করেছে ২৮ থেকে ২৯ মার্চ আর মামলা করা হয়েছে ৬ মে। সাফাত ঘটনার সাথে জড়িত না। ব্যবসায়ী হওয়াটাই তার কাল হয়েছে। তারা রিমান্ডপূর্ব যে কোন শর্তে জামিনের প্রার্থনা করেন।
আরেক আসামি সাদমান সাকিফের পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রহমান হাওলাদার, আব্দুর বারেক চৌধুরীও রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে সাফাতের ছয় দিন এবং সাদমানের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটে গ্রেপ্তার করা হয় সাফাত ও সাকিফকে। সাফাত আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে এবং সাকিফ পিকাসো রেস্তোরাঁর মালিক ও রেগনাম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে।
এদিকে মামলাটিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা সিএমএম আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় ওই দুই ছাত্রী জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে তাদরেকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।