জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে ‘গলাকাটা সিন্ডিকেট’ গঠন করে জমি রেজিষ্ট্রিতে প্রতিদিন কৃষকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে। ফলে ক্রেতা বিক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দলিল লেখক সমিতির সিন্ডিকেটের কাছে সাধারন খেটে খাওয়া কৃষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
দলিল লেখক সমিতির এই অবৈধ গলাকাটা সিন্ডিকেট ঠেকাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করার পরও থেমে নেই তারা।ঝিনাইদহ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত হতে কয়েক মাস আগে বিচারক মহোদ্বয় স্ব-প্রনোদিত হয়ে জেলার সকল সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে ‘গলাকাটা সিন্ডিকেট’ গঠন সমিতির সভাপতি/সাধারন সম্পাদকের উপর একটি আদেশ জারি করলে কিছুদিন এই অবৈধ্য সমিতি বন্ধ থাকার পর সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ সাব-রেজিষ্টারগন আদালতে এসে মুসলেকা দিয়ে জান।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে এ রকম সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ধরে কায়েম আছে। কথিত সেরেস্তা খরচের নামে দলিল লেখক সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বছরের পর বছর এই সিন্ডিকেট কৃষকদের জিম্মি করে তাদের কষ্টার্জিত টাকা অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে। সাধারণ দলিল লেখকদের ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও অনেক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদ ফুলে ফেঁপে উঠেছেন।
রাস্তায় দামি গাড়ি ও গ্রামে আলীশান বাড়ি তৈরী হয়েছে গ্রামের হতদরিদ্র কৃষকের রক্ত চোষা টাকায়। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ সব সমিতি সম্পূর্ন অবৈধ ও ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থি বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। ফলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ সব অবৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন।
শৈলকুপার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কতিপয় প্রভাবশালি দলিল লেখক অবৈধ্য সমিতি করে সাধারন লোকদের নিকট হতে প্রতি একলক্ষ টাকার দলিলে রেজিষ্ট্রি ফি ছাড়া বাড়তি সাড়ে তিন হাজার/চার হাজার টাকা আদায় করে। তাদের আদায়ের তালিকাও তৈরি করা আছে। সপ্তাহ শেষে পুরাতন লেখকসহ কতিপয় কিছু প্রভাবশালি লেখক সমস্ত টাকা ভাগ করে নেয়। এ ক্ষেত্রে নতুন লেখকদের কোন টাকা দেওয়া হয়না।কেহ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহশ পায়না।
প্রতিবাদ করলে নতুন দলিল লেখকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।গত দুই মাস আগে ঝিনাইদহ আদালতে মুসলেকা দিয়েছিল সমিতির নেতারা যে তাদের কোন সমিতি নেই। তারা কোন টাকা আদায় করে না।আদালতে মুসলেকা দেওয়ার পরও আবারও সেই কাজেই জোর দিয়ে শুরু করেছে। সমিতির নেতারা উপহাস করে বলেন, সাংবাদিকের কাজ সাংবাদিকেরা করবে। আদালত ও সাংবাদিক আমাদের কিছুই করতে পারবেনা বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে নতুন কয়েকজন দলিল লেখক জানান।
ইতিপূর্বে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে ‘গলাকাটা সিন্ডিকেট’ গঠন করে জমি রেজিষ্ট্রিতে প্রতিদিন কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে,এমনই একটি চাদাঁবাজির খবর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কতিপয় প্রভাবশালি দলিল লেখকই,সাধারন দলিল লেখক ও নতুন দলিল লেখকদের জিম্মি করে অবৈধ্যভাবে চাদাঁবাজির মাধ্যমে মান্নান মহুরী,মুনির খাঁন,আসাদ আলী,নান্নু মোল্লা,মিজান মহুরী সবাই আজ কোটিপতি হয়েছে।আগে এরা প্রকাশ্যে টাকা আদায় করত আর এখন সমিতির ঘরের মধ্যে আহম্মেদ মহুরী,মিজানুর মহুরী গোপনে টাকা আদায় করে। প্রতি মঙ্গলবার,বুধবার ও বৃহস্পতিবার রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন হয় আর টাকা ভাগাভাগি হয় শুক্র/শনিবারে।
শৈলকুপার কয়েকজন সাধারণ দলিল লেখক জানান, আমাদের কাছ থেকে সেরেস্তা খরচ ও বিভিন্ন খাতে দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা সভাপতি ও সম্পাদক লোপাট করেন। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নিরুপায় হয়েই এ টাকা দিতে হচ্ছে জমির মালিকদের। লেখক সমিতির এ আইন কেউ না মেনে চললে জমি রেজিষ্ট্রি করা হয় না। এমনকি সাব রেজিষ্টাররাও লেখক সমিতির কাছে জিম্মি। প্রতিটি সমিতির রয়েছে পেটোয়া বাহিনী। এই সমিতি গঠনও অবৈধ ভাবে করা হয়েছে।
প্রভাবশালী নেতারা বলে দেন অমুক সভাপতি ও অমুক সম্পাদক। ব্যাস ! এ ভাবেই চলবে বছরের পর বছর।শৈলকুপা উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে এ ধরণের একটি গলাকাটা কমিটি রয়েছে। শৈলকুপায় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নান্নু মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মান্নান মহুরী। তারাও সমিতির নামে চাঁদাবাজীতে লিপ্ত। এই সিন্ডিকেট শৈলকুপা উপজেলার জমি ক্রেতা বিক্রেতাদের জিম্মি করে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রতিবাদ করার কেও নেই। অফিসও এই সমিতির উপর নাখোশ।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, দলিল লেখক সমিতির নামে জোর জবরদস্তি করে টাকা আদায় বন্ধ করতে জেলা ও উপজেলা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কমিটিতে সিদ্ধিান্ত হয়। কিন্তু প্রশাসনের এ সব কাগুজে সিদ্ধান্তকেও আমলে নেন নি। এ বিষয়ে শৈলকুপা সাব-রেজিষ্টার জানান, সরকারী আইন মেনে যে কেও সমিতি করতে পারে। তবে দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় বেআইনী। তিনি বলেন, কোন কৃষক আমার কাছে এ পর্যন্ত অভিযোগ করেনি।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নান্নু মোল্লার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,এধরনের কোন সমিতি আমাদের এখানে নাই। দলিল লেখক সমিতির মাধ্যমে কোন বাড়তি টাকাও আদায় করা হয়না। ঝিনাইদহ আদালতে গিয়ে আমরা একথায় বলে এসেছি এবং মুসলেকাও দিয়েছি যে আমাদের কোন এধরনের বাড়তি টাকা আদায়ের সমিতি শৈলকুপাতে নায়।
ক্রেতা বিক্রেতাদের দাবি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্বঘাটন হওয়া সম্ভব এবং প্রকৃত অপরাধিদের ধরে আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হলে সাধারন কৃষক তথা সাধারন দলিল লেখক ও নতুন দলিল লেখকসহ ক্রেতা-বিক্রেতারা এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তি পেতো এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতসহ বেআইনী ভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ হত।