নিউজ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বলে মত দিয়েছেন পশ্চিমা পাঁচ বিশেষজ্ঞ। পাঁচ বিশেষজ্ঞের চারজনই যুক্তরাষ্ট্রের, অন্যজন যুক্তরাজ্যের। তারা প্রত্যেকেই তাদের ভবিষ্যদ্বাণীর পক্ষে কোনো না কোনো যুক্তি তুলে ধরেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শাসনকাল হবে স্বল্প সময়ের (শর্ট টার্ম)। হয় তাকে পদত্যাগ করতে হবে, না হয় তিনি অভিশংসিত হবেন। কারো মতে, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই এটা ঘটতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টকেই শেষ পর্যন্ত অভিশংসিত বা হোয়াইট হাউস থেকে অপসারিত করা যায়নি। বিল ক্লিনটন ও অ্যান্ড্রু জনসনকে অভিশংসনের ফায়ারিং লাইনে দাঁড় করানো গেলেও শেষ পর্যন্ত তারা সিনেটে গিয়ে খালাস পেয়ে যান। আর রিচার্ড নিক্সন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আগেই পদত্যাগ করেন। তবে ট্রাম্প নতুন এক যুগের প্রেসিডেন্ট এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অভিশংসিত (ইমপিচড) প্রেসিডেন্ট।
ইন্ডি হান্ড্রেড ডটকমে প্রকাশিত এই পাঁচ বিশেষজ্ঞের ভবিষ্যদ্বাণী এখানে আলোচনা করা হলো। এ নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্টও।
রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ অ্যালান জে লিখ্টম্যান এই পাঁচ বিশেষজ্ঞের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ‘ভবিষ্যদ্বাণীর অধ্যাপক’ খ্যাত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের আমেরিকান রাজনৈতিক ইতিহাসের অধ্যাপক অ্যালান জে লিখ্টম্যানের ভবিষ্যদ্বাণীটি। তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই ট্রাম্পের অভিশংসনের আশঙ্কা ৫০ শতাংশ।
এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিখ্টম্যান ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বলেছিলেন শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে লিখ্টম্যানের ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যায় এবং ট্রাম্প এ জন্য লিখ্টম্যানকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠিও লিখেছিলেন। গত আটটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভিত্তিতে তৈরি করা একটি মডেলের মাধ্যমে তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
গত ১৩ এপ্রিল দি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে লিখ্টম্যান ট্রাম্পের অভিশংসনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। পরে ১৮ এপ্রিল ‘দ্য কেস অব ইমপিচমেন্ট’ নামে তার একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে, যাতে তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। গতকাল শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ১০০ দিনের শাসনকাল উপলক্ষে এ বিষয়ে আবারও গণমাধ্যম লিখ্টম্যানের মুখোমুখি হয়। তাকে প্রশ্ন করা হয়, এবার কিসের ভিত্তিতে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন। ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রশ্নের জবাবে লিখ্টম্যান বলেন, ‘আমার এবারের ভবিষ্যদ্বাণীর ভিত্তি হলো আমেরিকার অভিশংসনের ইতিহাস, অভিশংসনপ্রক্রিয়া ও ট্রাম্পের নিজের ইতিহাস। ’
আমেরিকান ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক রোলান্ড এল ফিনম্যান বলেন, ৭০ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিণতি হতে পারে উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসনের ৩১ দিন মেয়াদি অথবা জেমস গারফিল্ডের ১৯৯ দিনের শাসনকালের মতো কিছু। সম্প্রতি তিনি একটি ব্লগ পোস্টে এই মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, হেনরি হ্যারিসন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ক্ষমতায় আরোহণের মাত্র ৩১ দিনের মাথায় মারা যান। আর জেমস গারফিল্ড দায়িত্ব নেওয়ার ১৯৯ দিনের মাথায় আততায়ীর গুলিতে মারা যান।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটর নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক হাফ গাস্টারসন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ফিনম্যানের মতোই। তার মতে, ট্রাম্প তার নিজ দলের মাধ্যমেই অপসারিত হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যাঞ্জেলিনা উইলসন মনে করেন, আগামী ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে ট্রাম্প অভিশংসনের মুখোমুখি হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ ও কেলেঙ্কারির কারণে ট্রাম্প অভিশংসনের মুখোমুখি হবেন বলে মনে করেন হার্ভার্ড ল স্কুলের অধ্যাপক নোয়াহ ফিল্ডম্যান।