নিউজ ডেস্ক:
ল্যাপটপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপের যে আয়ু, তার তুলনায় দ্বিগুণ দাবী করে থাকে বলে, এক পরীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে।
একটি তদন্তে দেখা গেছে, প্রায় সব ল্যাপটপ নির্মাতা ব্র্যান্ডগুলো তাদের ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় গ্রাহকদের কাছে অনেক বেশি বাড়িয়ে বলে থাকে। এমনকি বেশ কিছু ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপের আয়ু যা বলা হয়ে থাকে, তার অর্ধেকেরও কম সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ দেয়।
যুক্তরাজ্যের পণ্য ও সেবা পর্যালোচনাভিত্তিক গ্রুপ ‘হুইচ?’ ৭টি ব্র্যান্ডের ৬৭টি মডেলের ল্যাপটপ পরীক্ষা করে দেখেছে, ব্যাটারির আয়ুর ক্ষেত্রে ল্যাপটপগুলোর পারফরম্যান্স খুবই দূর্বল।
গবেষকরা পরীক্ষায় দেখতে পেয়েছেন, ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ুর ক্ষেত্রে মিনিটের গড়মিল নয়, বরঞ্চ ঘণ্টার গড়মিল রয়েছে।
এমনকি সবচেয়ে খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলো তাদের ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ু ৫০% শতাংশ বা তারও বেশি বাড়িয়ে বলে থাকে, ফলে ব্যবহারকারীদের দুইবার চার্জ করার লাগে।
এইচপি এবং ডেল, সবচেয়ে বড় দুই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ল্যাপটপের ব্যাটারির খুবই বাজে পারফরম্যান্স দেখা গেছে। পরীক্ষায় এইচপির ল্যাপটপে দেখা গেছে, ল্যাপটপগুলো গড়ে ৫ ঘণ্টার মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ দিয়েছে, অথচ প্রচার হয়ে থাকে, এগুলো ৯ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ব্যাকআপের সুবিধাসম্পন্ন।
ডেল ল্যাপটপের গড় ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় ৫ ঘণ্টা ১২ মিনিট পাওয়া গেছে, অথচ ৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ব্যাটারি আয়ু হওয়ার কথা।
পরীক্ষায় কেবলমাত্র অ্যাপলের ম্যাকবুকের ক্ষেত্রে গড় ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় ১০ ঘন্টা ১৫ মিনিট দেখা গেছে, যা অ্যাপলের প্রচারিত ১০ ঘন্টা ব্যাকআপের সময়ের চেয়েও বেশি। এবং ‘ম্যাকবুক প্রো ১৩’ ল্যাপটপটি পরীক্ষায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিয়েছে, যেখানে এই ল্যাপটপটির ব্যাটারি ব্যাকআপ হওয়ার কথা ১০ ঘণ্টা।
এসার ব্র্যান্ডের ৮টি মডেলের ল্যাপটপ, অ্যাপলের ৩টি, আসুসের ৮টি, ডেলের ১০টি, এইচপির ১২টি, লেনেভোর ২০টি এবং তোশিবার ৬টি মডেলের ল্যাপটপের ব্যাটারির ব্যাকআপ সময়ের ওপর ‘হুইচ?’ এই পরীক্ষা চালিয়েছে।
দুইভাবে ব্যাটারির আয়ু পরীক্ষা করা হয়েছে। একটি পরীক্ষায় ব্যাটারি চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিনেমা চালানো হয়েছে এবং আরেকটি পরীক্ষায় ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে টানা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা হয়েছে ব্যাটারি চার্জ শেষ না পর্যন্ত।
‘হুইচ?’ এর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এই পরীক্ষা ল্যাপটপের সত্যিকার ব্যবহারের প্রতিনিধিত্ব করবে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় নিয়ে যা দাবী করে থাকে, সেই দাবীর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। আমরা খুবই বিস্মিত হয়েছি যে, কিভাবে তারা এই দাবী করা থাকে।’
‘অনেক ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর কাছেই ব্যাটারি লাইফের জন্যেই ল্যাপটপ কেনাটা প্রধান কারণ হয়ে থাকে। অথচ আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছি যে, নির্মাতাদের দাবীর সঙ্গে প্রকৃত ব্যাকআপ সময় খুব কমই সত্য।’
ব্যাটারির লাইফের এই ভিন্নতার কারণের ব্যাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘হুইচ?’কে ডেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ব্যাটারির লাইফের নির্দিষ্ট সময় প্রত্যাশা করা কঠিন যা সরাসরি সব গ্রাহকের ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ প্রত্যেকটি ব্যবহারকারী সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাদের ল্যাপটপ ব্যবহার করে। বিষয়টা অনেক গাড়ি ড্রাইভিংয়ের মতো। একই গাড়ি বিভিন্ন মানুষ চালানোর সময় কিভাবে চালাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন গ্যাস মাইলেজ প্রদর্শিত হয়।’
এইচপি তাদের ব্যাখায় বলেছে, ‘রিয়েল লাইফ স্ক্রিপটস ব্যবহার এবং রিয়েল অ্যাপ্লিকেশন চালানো যেমন মাইক্রোসফট অফিস এবং সঠিক স্পেসিফিকেশন যেমন স্ক্রিন রেজুলেশ্যন কেমন সেট করা হচ্ছে- এসব বিষয় ব্যাটারি লাইফে প্রভাব ফেলে।’
৭টি ব্র্যান্ডের ৬৭টি মডেলের ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপের আয়ু নিয়ে ‘হুইচ?’ এর পরীক্ষার ফলাফল হচ্ছে:
এসার
দাবীকৃত ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় : ৭ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট।
পরীক্ষায় গড় ব্যাকআপ সময় পাওয়া গেছে : ৫ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট।
অ্যাপেল
দাবীকৃত ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় : ১০ ঘণ্টা।
পরীক্ষায় গড় ব্যাকআপ সময় পাওয়া গেছে : ১০ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।
আসুস
দাবীকৃত ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় : ১০ ঘণ্টা ১২ মিনিট।
পরীক্ষায় গড় ব্যাকআপ সময় পাওয়া গেছে : ৬ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট।
ডেল
দাবীকৃত ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় : ৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।
পরীক্ষায় গড় ব্যাকআপ সময় পাওয়া গেছে : ৫ ঘণ্টা ১২ মিনিট।
এইচপি
দাবীকৃত ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় : ৭ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট।
পরীক্ষায় গড় ব্যাকআপ সময় পাওয়া গেছে : ৫ ঘণ্টা ২ মিনিট।
লেনোভো
দাবীকৃত ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় : ৬ ঘণ্টা ৪১ মিনিট।
পরীক্ষায় গড় ব্যাকআপ সময় পাওয়া গেছে : ৪ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট।
তোশিবা
দাবীকৃত ব্যাটারি ব্যাকআপ সময় : ৭ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট।
পরীক্ষায় গড় ব্যাকআপ সময় পাওয়া গেছে : ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।
তথ্যসূত্র : মিরর