দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনকালে এমপি টগর
নিউজ ডেস্ক:দর্শনার কেরুজ চিনিকলের ২০১৯-২০ আখ মাড়াই মৌসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চিনিকলের ক্যান কেরিয়ার চত্বরে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়। দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ জাহেদ আলী আনছারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি টগর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের চিনিশিল্পের নাজুক হাল। সময়ের পরিক্রমায় চিনিশিল্পের মেরুদ- ভেঙে ধ্বংসের মুখে ধাবিত হচ্ছে। চরম বিপর্যয়ের মুখে দেশের চিনিশিল্প অবস্থান করলেও এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। আর এ প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হওয়ায় কেরুজ চিনিকলকে আধুনিকায়ন করতে গত বছরই সরকার সাড়ে ৪৭ কোটি টাকার পরিবর্তে রিটেন্ডারের মাধ্যমে ১ শ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিল। শুধুমাত্র কেরু অ্যান্ড কোম্পানি নয়, সরকারের আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান যাতে আজীবন টিকে থাকে। তাই প্রতিবছরেই সরকার কোটি কোটি টাকা এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ভর্তূকি ও ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে।
এমপি টগর আরও বলেন, রুগ্ন শিল্পকে লোকসানের বোঝা কমাতে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ, কর্মঠ, দূরদর্শিতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জেলাবাসীর আখচাষের ওপর উদ্যোগী হতে হবে। আখচাষিরাই মিলের প্রাণ। তাই গত বছরই আখচাষিদের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদের আখচাষ বাধ্যতামূলক করে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। আবার চাষিদের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আখচাষিদের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সে কারণে আধুনিক পদ্ধতিতে মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে যেমন ই-পূর্জি দেওয়া হচ্ছে, তেমনি ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আখের মূল্য পাচ্ছেন চাষিরা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু ও দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান।
ডিজিএম সম্প্রসারণ (কৃষি) গিয়াস উদ্দিনের উপস্থাপনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন দর্শনা কেরুজ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝণ্টু, দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন, দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহাবুবুর রহমান, কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) আসাদুল কবীর, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) উত্তম কুমার কু-ু, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) ফিদা হাসান বাদশা, মহব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দীলিপ কুমার বিশ্বাস, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন, এসিপিও (ইক্ষুক্রয়) মনিরুজ্জামান মনির, কেরুজ চিনিকলের সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, শ্রমিক নেতা ফিরোজ আহমেদ সবুজ, কেরুজ সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর গিয়াস উদ্দিন পিনা প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন কেরুজ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাজি আব্দুল খালেক।
আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ কেরুজ কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা কেইন কেরিয়ারের ডোঙায় আখ নিক্ষেপের মধ্যদিয়ে মাড়াই মৌসুম ২০১৯-২০-এর শুভ উদ্বোধন করেন।
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ আখ মাড়াই মৌসুমে ৯৪ কার্যদিবসে ১ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাড়াইকৃত আখের চিনি আহোরণের গড় হার ধরা হয়েছে ৭.৬০। এ মাড়াই থেকে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১ শ মেট্রিক টন।