মু.ওয়াছীঊদ্দিন,লক্ষীপুর প্রতিনিধি:- ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ল²ীপুর জেলার পুরাকীর্তি ও ঐতিহ্যবাহী লক্ষীপুর মটক মসজিদ। আজ শুক্রবার সকালে পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের লক্ষীপুর-রামগতি সড়কের মজুপুর গ্রামে অবস্থিত এ মসজিদটি স্কেকেবেটর দিয়ে ভাঙ্গতে দেখা যায়। মসজিদ কমিটির লোকজন বলছে একই জায়গায় নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করার লক্ষ্যে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে পুরাতনটি। কিন্তু মসজিদ ভাঙ্গার দৃশ্যের একটি ছবি ফেসবুক প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে এটি ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। হাজার হাজার ফেসবুক পাঠক এ কমিটির সিদান্তটি মেনে নিতে পারেনি।
লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে জেলার পুরাকীর্তি তালিকায় মসজিদটির ছবিসহ বর্ণনা রয়েছে। বড় একটি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে মটকা মসজিদ নামেই পরিচিত। বাংলা ১২০৬ সালে নির্মিত হয় এ মসজিদটি। তাই ২শ ১৮ বছরের এ পুরাতন মসজিদটির ভাঙ্গার দৃশ্যটি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মসজিদ কমিটির এক সদস্যের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কমিটির সদস্যের অনেকেই মসজিদের পুরানো এ ভবনটি ভাঙ্গার পক্ষে ছিলেন না। তাদের মতামত ছিল মসজিদের মূল ভবনটি সংস্কার করে এর সৌন্দর্যবর্ধন করে পিছনের দুর্বল ৩য় তলা ভবনটি ভেঙ্গে মূল ভবনের উত্তরের খালি জায়গাসহ নতুন ভবন তৈরি করতে। কিন্তু তাদের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে।
মসজিদ ভাঙ্গা অবস্থা মসজিদের পাশে দাঁড়ানো থাকা বয়ষ্ক একজন সত্তর উর্ধ্ব একজন আক্ষেপের দৃষ্টিতে মসজিদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাছে এগিয়ে গিয়ে মসজিদ ভাঙ্গা সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা আমাদের ঐতিহ্যই না বৃহত্তম নোয়াখালীর ঐতিহ্য ও বটে। তার মতে এটা কোন ভাবেই ঠিক হয়নি।
বেসরকারী চাকুরিজীবি যুবক হাসনাত জানান, আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কি রেখে যাচ্ছি? মাঝে মধ্যে অনেকে এ মসজিদে কেবল জুম্মার নামাজ আদায় করতে অনেক দূর-দূরান্ত হতে আসেন।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষীপুর পৌর আওয়ামলীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন প্রতিবেদকে কে বলেন, পুরাতন মসজিদের মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তে ৩ তলা বিশিষ্ট নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হবে। যেখানে তৃতীয় তলার উপরে এ মসজিদের ন্যায় গম্বুজ (মটকা ) তৈরি করা হবে। কিন্তু পুরাকীর্তি হিসেবে এটি ভাঙ্গতে মসজিদ কমিটি পারে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে লক্ষীপুর জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে লক্ষীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, এটা আমাদের ঐতিহ্য, এটা কে না ভেঙ্গে বরং সংরক্ষণ দরকার ছিল।
প্রতিবেদকের গবেষেণা তথ্য অনুযায়ি, লক্ষীপুর শহরের উপকন্ঠে মজুপুর গ্রামে রামগতি সড়কের দক্ষিণ পূর্ব পাশে বিশাল আকারের একটি গম্বুজ মাথার উপর নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। এটির নাম মজুপুর মটকা মসজিদ। বাংলা ১২০৬ সালের জনৈকা দুর্লভ বাণুর দানকৃত অর্থে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিলালিপিতে আজো তা স্পষ্ট লেখা আছে। সময়ের প্রয়োজনে মসজিদের পূর্বাংশ বর্ধিত করা হয়। মসজিদের প্রথমাংশ বর্গাকার। ভেতরে ২৫/৩০ জন একত্রে নামাজ পড়তে পারে। মসজিদের ভেতরের দেয়ালে লতাপাতার সুন্দর কারুকাজ তখনকার দিনের নির্মাতাদের শৈল্পিক দক্ষতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বর্তমানে সময়ের প্রয়োজনে মসজিদটির বর্ধিতাংশ ত্রিতল করা হয়েছে। মসজিদের পাশে একটি দীঘি আছে। মটকা মসজিদ এবং দীঘি পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।