মেহেরপুর নতুন দরবেশপুরের শৈলমারী বিলপাড়ে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহতের ঘটনা
কোনো আটক নেই : উন্মোচিত হয়নি হত্যাকা-ের মূল রহস্য!
নিউজ ডেস্ক:মেহেরপুর সদরের পিরোজপুর ইউনিয়নের নতুন দরবেশপুরের শৈলমারী বিলপাড়ে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত যুবলীগের নেতা রোকন বিশ্বাস ও তাঁর চাচাতো ভাই হাসান বিশ্বাসের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে তাঁদের দুজনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। আপন চাচাতো দুই ভাইয়ের মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তাঁদের অকাল মৃত্যু যেন কেউই মেনে নিতে পারছে না। গতকাল আসরের নামাজের পর গ্রামের কবরস্থানে দুই ভাইয়ের লাশ পাশাপাশি দাফন করা হয়।
গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নতুন দরবেশপুর গ্রামের শৈলমারী বিলপাড়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় ইদ্রিস মাস্টারের ছেলে পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রোকন বিশ্বাস (৩২) ও আজাদ বিশ্বাসের ছেলে ওয়ার্ড যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক হাসান বিশ্বাসকে (৪৫)। বিল-সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাঁদের দুজনকে পরিকল্পিতভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামবাসী। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। যে কারণে হত্যাকা-ের মূল রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি।
নিহত রোকন বিশ্বাসের পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দরবেশপুর গ্রামের উকিল বাড়ির ইদ্রিস মাস্টারের দুই ছেলের মধ্যে রোকন বিশ্বাস ছোট। তিনি মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর লেখাপড়া করেননি। এরপর ভুসিমাল ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই প্রায় ১০ বছর যাবৎ চাচাতো ভাই হাসান বিশ্বাসের সঙ্গে পার্টনারশিপে শৈলমারী (সরকারি) বিল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন তিনি। ২০০৫ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার মৃত খাদেম আলীর একমাত্র মেয়ে আলেয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রোকন। পারিবারিক জীবনে তিনি ওভি নামের এক পুত্র ও রোজ নামের এক কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর একমাত্র ছেলে অভি (১০) স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে আনিকা তাবাচ্ছুম রোজের বয়স মাত্র ১০ মাস। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী আলেয়া পাগলপ্রায়। তাঁর মনে এখন হাজারো প্রশ্ন, হাজারো জিজ্ঞাসা। ‘আমার স্বামী কখন বাড়ি ফিরবে? বলেন ভাই, সে কি আর আপনাদের সঙ্গে ঘুরতে যাবে না? কেন আমার নিরপরাধ স্বামীকে হত্যা করা হলো? সে তো কারও কোনো দিন ক্ষতি করিনি। এই মাসুম বাচ্চাকে কে দেখবে? বড় হয়ে কাকে সে আব্বা বলে ডাকবে? কে তার দায়ভার নেবে?’ কথা প্রসঙ্গে এমন হাজারো প্রশ্ন ছুড়ে দেন স্ত্রী আলেয়া। তিনি বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার ন্যায্য বিচার চাই। দ্রুত আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির ব্যবস্থা করা হোক।’
নিহত হাসান বিশ্বাস একই পাড়ার আজাদ বিশ্বাসের চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সবার বড়। নিজস্ব জমিসহ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন তিনি। প্রায় ১০ বছর যাবৎ রোকনের সঙ্গে শৈলমারী বিলে মাছ চাষ করেন তিনি। সাংসারিক জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। বড় ছেলে ফরহাদ এ বছর মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে নিয়োগ পেয়েছেন এবং ছোট ছেলে ফাহিম একাদশ শ্রেণির ছাত্র। স্বামীকে হারিয়ে শোকে কাতর স্ত্রী ফরিদা খাতুন। এ প্রতিবেদকের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিলের কারণেই আমার স্বামীকে আজ প্রাণ দিতে হলো। এর সঙ্গে এই গ্রামের মানুষই জড়িত। কারণ, রোকন আর হাসান বেঁচে থাকলে এই বিল অন্য কেউ নিতে পারবে না। আমার স্বামীর এই বিল নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও প্রতিবছর যেকোনো মূল্যে বিল ইজারা নেয় রোকন। তাই শত্রুতা করে দুজনকেই হত্যা করা হলো। এই বিল নিয়েই মূল শত্রুতা।’
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ দারা খান বলেন, রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে পুলিশের একাধিক দল। এ ছাড়া অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই জড়িতদের আটক করে হত্যাকা-ের মূল রহস্য উন্মোচন করা হবে।