নিউজ ডেস্ক:ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একসময় মানুষের মৌলিক চাহিদার অত্যতম বাসস্থান হিসেবে মাটির তৈরি ঘরের ব্যাপক প্রচলন ছিল। উপজেলার সুন্দরপুর, দুর্গাপুর, জামাল, কোলা, নিয়ামতপুর, মালিয়াট, রায়গ্রাম, শিমলা, রোকনপুর, ত্রিলোচনপুর, রাখালগাছি, কাষ্টভাঙ্গা, বারোবাজারসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই চোখে পড়ত মাটির তৈরি ঘর। কিন্তু এখন আর এগুলো তেমন চোখে পড়ে না। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে শহরের পাশাপশি গ্রামের মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। জীবনযাত্রর মান উন্নয়নে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম থেকে হারিয়ে গেছে এ মাটির ঘর। দুই যুগ আগেও প্রতিটি গ্রামের প্রায় ৬০ ভাগ ঘর ছিল মাটির। বসবাসের জন্য এ প্রাচীন মাটির ঘর ব্যবহার হতো। শীতকালে যেমন গরম অনুভব হতো, তেমনি গ্রীষ্মকালেও মাটির ঘরে থাকত শীতল অনুভূতি। যা বর্তমান যুগের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মতোই আরামদায়ক।
এ ঘর তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় এঁটেল বা দোআঁশ মাটি। ঘর তৈরির জন্য তেমন খরচ হয় না। কৃষক-কৃষাণী ও তাঁদের ছেলে-মেয়েরা মিলেই সাধারণত এ ঘর তৈরি করে ফেলেন। যে মাটি দিয়ে ঘর তৈরি করা হয়, সেই মাটি প্রথমে কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে ঝরঝরে করে নেওয়া হয়। তারপর এর সঙ্গে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে থকথকে কাঁদা করে নেওয়া হয়। এরপর সেই কাদামাটি দিয়ে তৈরি করা হয় মাটির ঘর। অল্প-অল্প করে মাটি বসিয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উঁচু করে এবং সেই কাদায় ২৫-৩৫ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কারণ দেয়াল একবারে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত উঁচু করা হয়। কয়েক দিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার ওপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দেয়াল তৈরি করে কিছু দিন রোদে শুকানো হয়। তারপর এ দেয়ালের ওপর বাঁশের চাল তৈরি করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেওয়া হয়। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে দুই-তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শত বছর পর্যন্ত টিকে থাকে।
এ ব্যাপরে কালীগঞ্জ সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কখনো মাটির ঘর দেখিনি। তবে দাদা ও বাবার কাছে মাটির ঘরের কথা শুনেছি। একসময় গ্রামের অনেকেই মাটির ঘরে বসবাস করত। এটা দেখতে নাকি খুবই সুন্দর।’
কালীগঞ্জ উপজেলার তৈলকূপী গ্রামের বৃদ্ধ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘২০-৩০ বছর আগেও গ্রামের বেশির ভাগ ঘর মাটির ছিল। একসময় আমার বাড়িতেও দুটি মাটির ঘর ছিল।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান নিয়েছে পাকা ঘর। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবাই বাহারি রকমের পাকা ঘর তৈরি করছে। এখন মাটির ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে বিলুপ্তপ্রায়। একদিন মাটির ঘরের কথা বাংলার মানুষের মন থেকে হারিয় যাবে। তখন মাটির ঘর রূপকথার গল্পে, সাহিত্যর পাতায় বা জাদুঘরে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।