নিউজ ডেস্ক:
২১ আগস্ট উপলক্ষে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় আওয়ামী লীগের আয়োজনে ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও রাষ্ট্রীয় মদতে জঙ্গিবাদের উত্থান’ শীর্ষক বিশেষ ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ওয়েবিনারটি সরসারি প্রচার করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকায় শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে চালানো হয় নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ। গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ও প্রধান টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আয়োজিত সমাবেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সন্ত্রাসের হামলার শিকার হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের আঘাতে আইভি রহমানসহ মোট ২৩ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারান।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয় তৎকালীন জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে, তাদের ছত্রছায়ায়। সেদিন মুক্তাঙ্গনে এমন হামলা করা সম্ভব নয় বলে আমাদের সরিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে নিয়ে আসতে বাধ্য করে যেন ওদের প্ল্যান সাকসেস করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, গ্রেনেড হামলার পরপরই টিয়ার গ্যাস ও গুলি করে নেতা-কর্মীদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং যারা হামলার সঙ্গে জড়িত তারা যেন নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতেই পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর ফায়ার ব্রিগেড ডেকে পানি দিয়ে পুরো এলাকা ধুয়ে আলামত নষ্ট করে ফেলে। আহত নেতা-কর্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা না করে প্রশাসন উল্টো আমাদের উপর হামলা করলো। নামমাত্র একটা তদন্ত কমিটি গঠন, জর্জ মিয়া নাটক সাজানো, এমনকি সংসদ চলাকালীন সময়ে এমন ঘটনা ঘটলেও সংসদে এই ব্যাপারে আলোচনা করারও সুযোগ দেয়া হয়নি। কেনো এমনটা করেছিলো তৎকালীন জোট সরকার প্রশ্ন করেন আমির হোসেন আমু।
এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আরো বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার শুরুটা ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে হত্যা, জাতীয় ৪ নেতা হত্যা, বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবেশ, একটি নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুটা হয়েছিলো। ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্টে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায় সেই পুরানো একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। যখনই শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে শুরু করেছিলো তখনই একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা বারবার হামলা চালিয়েছে শেখ হাসিনার উপর। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, এটা ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতারই একটি অংশ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতার আর এক কেন্দ্রবিন্দু ছিলো হাওয়া ভবন- যা পরিচালনা করতো খালেদা জিয়ার কু-পুত্র তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা হয়েছে তাতে একবারে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়নি, এটি ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে। ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সেদিন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জীবননাশের উদ্দেশ্যে বাড়িঘরে আগুন দেয়, ধর্ষণ করে, চিরদিনের জন্য আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংককে ধ্বংস করাই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তথা জঙ্গিবাদ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্টীয় পৃষ্টপোষকতায় সন্ত্রাস লালন শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৭৯ সালে পার্লামেন্টে সেটাকে আইনে রূপান্তর করে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শুরুটা জিয়া পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান, যার প্রমাণ ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং ২০০১-২০০৬ ক্ষমতায় থাকাকালীন তার কু-পুত্র তারেক রহমান জঙ্গিদের লালন-পালন ও আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।
তিনি আরো বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা যে খালেদা জিয়ার অনুমোদনে এবং তারেক রহমানের পরিচালনায় হয়েছে সেটা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় তখন জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের উত্থান হয়েছে, বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছে, ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাও এই খালেদা জিয়ার আমলেই হয়েছে।