ঝালকাঠির খাদ্য গুদাম দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। নদীতে নিজস্ব পল্টুন না থাকায় বার্জ থেকে ঝুঁকি নিয়ে মালামাল উঠানামা, ভিতরে যানবহন চলাচলের সম্পূর্ন অনুপযোগী রাস্তা, শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি না করা, দীর্ঘদিন টেন্ডার না হওয়ায় সামান্য রেটে ঠিকাদারের মালামাল সরবরাহসহ বিভিন্ন কারনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কতৃপক্ষের দাবী মামলা জটিলতার কারনে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত জেলা খাদ্য গুদাম।
জানাযায়, ১৯৮৬ সনের পর থেকে গুদামের ভিতরের সড়ক গুলো ভেঙ্গে গেছে। যা দিয়ে গুদাম থেকে হাজার হাজার টন চাল ও গম ট্রাকে লোড করা কঠিন হয়ে পরেছে। এ দূরাবস্থার কারনে ট্রাক বা কোন যানবহন ভিতরে প্রবেশ করতে না চাওয়ায় ঠিকাদারকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া । সড়কের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যাথা নেই বলে ঠিকাদারদের অভিযোগ।
একই ভাবে ঝালকাঠি খাদ্য গুদামের মালামাল উঠানামায় অদ্যবধি নির্মান করা হয়নি কোন পল্টুন বা জেটি। তাই প্রতিদিন মাল বহনকারি বার্জের সাথে বাঁশ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ন সাকো তৈরী করার পর ঠিকাদার শ্রমিকদের মাধ্যমে গুদামে মালামাল উঠাচ্ছে। এছারাও গুদাম থেকে উপজেলাসহ বিভিন্ন গুদামের মালামাল কাগজপত্র বিহীন ট্রলারে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে ঠিকাদাররা আপত্তি জানালেও তাদের মাল উঠাতে বাধ্য করা হচ্ছে। গত ৬ ডিসেম্বর ঝালকাঠি খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায় পালবাড়ি নদীতে চাল নেয়ার অপেক্ষায় মা বাবার দোয়া নামের একটি ট্রলার। ট্রলারের চালক মো. শহিদ খান জানান, আমি রাজাপুর উপজেলা গোডাউনের চাল নিতে এসেছি। কিন্তু আমার কোন কাগজপত্র না থাকায় ঠিকাদার মজিদ হাওলাদারের প্রতিনিধি আলম সর্দার মাল উঠাতে রাজি হচ্ছেনা। এভাবে অবৈধ ট্রলারে চাল উঠিয়ে দেয়ার পর তা নিয়ে চালক উধাও হলে বা কোন দূর্ঘটনায় পরলে দায়ভার কে নিবে এমন প্রশ্নের জবাবে কর্তৃপক্ষ বলছে এর দায় ঠিকাদারের।
একই দিন মংলা থেকে চাল ভর্তি বার্জের সুকানি রাজিব ও মাষ্টার মেহেদী হাসান জানান, এখানে পল্টুন না থাকায় কিভাবে গুদামে উঠাবো তাই ভাবছি। গত ৪ ডিসেম্বর রাতে এসে এ অবস্থায় কোন উপায় না পেয়ে ঠিকাদারের স্বরণাপন্ন হই। ঠিকাদার বাঁশ ও সিড়ি যোগাড় করে ঝুকিপূর্ন সাঁকো তৈরী করার পর শ্রমিকরা গুদামে মাল উঠতে শুরু করে। আর এখানে পল্টুন না হওয়া পর্যন্ত আসবনা বলে বার্জের মাষ্টার ও সুকনি জানায়।
এদিকে ঝালকাঠি খাদ্য গুদামের ভিতরে বাইরে এ দূরাবস্তার কারনে বাড়তি খরচ হওয়ায় ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়াও শ্রমিক সংকটের কারনে পল্টুন না থাকায় বার্জ থেকে মালামাল উঠাতে নামাতেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ঠিকাদারদের। ঠিকাদার সূত্রে জানাযায়, ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের মালামাল নামাতে টন প্রতি ১৮০ টাকা, বরগুনা খাদ্য গুদামে টন প্রতি ৩৮০ টাকা, বেতাগী ২৮০ টাকা, বামনা ২৯০ টাকা হলেও ঝালকাঠি, আমুয়া ও নলছিটি ঠিকাদারদের টন প্রতি খরচ দেয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকা। ঠিকাদারদের অভিযোগ আমুয়া গুদাম থেকে ঠেলাগাড়িতে দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে মালামাল লোড করতে হয়।
একই ভাবে নলছিটি ষ্টিমার ঘাট থেকে ভ্যানে বা টমটমে অনেক দূরে গুদামে মালামাল নিয়ে উঠতে হচ্ছে। ২০০৭ সনের টেন্ডারে এ রেট নির্ধারন করা হয়। এ প্রসঙ্গে খাদ্য গুদামের বরিশাল বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার এবং আমুয়া গুদাম শ্রমিক হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার আবুল বাশার বলেন, কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত নতুন টেন্ডার আহ্বান না করে এই পুরানো রেটে ঝালকাঠির মালামাল সরবরাহ করতে ঠিকাদারদের অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া আগের তুলনায় কাজ না থাকায় শ্রমিকরা এখানে কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের ৬শ টাকায় শ্রমিক নিয়ে মাল সরবরাহ করতে হচ্ছে।
এভাবে কাজ করা সম্ভব না হলেও লাইসেন্স কালো তালিকা ভূক্ত হবার ভয়ে কাজ করতে হচ্ছে বলে নলছিটি ও রাজাপুরের ঠিকাদার শামসুল হক জানান।
এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নাজমুল হোসেন জানান, ঝালকাঠি খাদ্য গুদামের ভিতরের অচল সড়কসহ পল্টুন স্থাপন না করায় দূর্ভোগের শেষ নেই। এ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছি। কিন্তু বাজেট পাচ্ছিনা। মালামাল উঠানোর নতুন রেট বৃদ্ধির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছেনা মামলা জটিলতার কারনে। কাগজপত্র বিহিন ট্রলারে সরকারি খাদ্য গুদামের মালামাল পাঠানোর দায় আমাদের আছে তবে ঠিকাদারের বেশি। অপরদিকে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মো. মহসীন জানান, আইবিসিসি ও আইআরটিসি ঠিকাদারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় ৫২ টাকা দরে কাজ করানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিভাগীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে সেই কাজ করানোর সুযোগ নেই। বিভাগীয় ঠিকাদাররা ১-১৫ কিলোমিটার ২০ টাকা দরে কাজ করলে সরকারি অপচয় কম হতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এখন এটা সম্ভব নয়।