নিউজ ডেস্ক:
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যেকোন মূল্যে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত করা হবে। এ জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করবে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আগামী অক্টোবরের মধ্যে সুন্দরবন জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত করার ঘোষণা দেন তিনি।
আজ বরিশাল নগরীর রূপাতলী র্যাব-৮ কার্যালয়ে সুন্দরবনের আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন র্যাব মহাপরিচালক।
র্যাব-৮ কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, সর্বনাশা মাদকের ছোবলে সমাজ ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। এই ক্ষত সারাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, মাদকের সাপ্লাই কাটের পাশাপাশি ডিম্যান্ড কাটের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র সফল হবে না বলে জানান র্যাব ডিজি।
যারা এখনো সুন্দরবনে দস্যুতায় জড়িত তাদের দ্রুত সময়ের পথ্যে সু-পথে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ করা আড়াই শ’ জেলের সবাই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। অথচ এই দস্যুরা শতশত জেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ বাবদ লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে। সেই টাকার সিংহভাগ কোথায় গেল, কারা তাদের অস্ত্র-গুলি সরবরাহ করত, কারা তাদের গহীন সুন্দরবনে খাদ্য ও রসদ সরবরাহ করত, কারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা আনতে সহায়তা করত, কারা তাদের দস্যুতা করতে বাধ্য করেছে সবকিছুই খতিয়ে দেখছে র্যাব। অভিযুক্ত কেউ-ই রেহাই পাবে না বলে হুশিয়ারি দেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুজ্জামান, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশসনস্) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি মো. আজাদ মিয়া, লে. কর্নেল মাহবুব হোসেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, বরিশাল মহিলা টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ইতিপূর্বে আত্মসমর্পণ করা আড়াই শ’ জলদস্যুর মধ্যে ২০ জনের পরিবারকে সেলাই মেশিন, ৪ জনের পরিবারকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ১০ হাজার টাকা, ৩ জনের পরিবরকে শিক্ষা সহায়তা বাবদ ৫ হাজার টাকা করে এবং ২৪৩টি পরিবারকে ঈদ সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। পরে সেলাই, ব্লক বাঁটিক এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্ধোধন করেন র্যব মহাপরিচালক।
উল্লেখ্য, গত ২ বছরে সুন্দরবনের ২৩টি জলদস্যু গ্রুপের ২৪৩ জন সদস্য ৩৭৯টি অস্ত্র এবং ১৮ হাজার ৮শ’ ৪ রাউন্ড গুলিসহ র্যাবের কাছে কাছে আত্মসর্পণ করে। এদের মধে ২০টি গ্রুপের ১৯৪ জন স্ত্রী, ১৮৫ জন মেয়ে এবং ১৮৬ জন ছেলে। কারিগরি শিক্ষার শর্ত অনুযায়ী স্ত্রীদের মধ্যে ৫০ জন ও ৪২ জন মেয়ে এবং ৩৮ জন ছেলে। এদের মধ্যে ২৩ জন সেলাই, ২৪ জন ড্রাইভিং, ১ জন বুটিক, ৩ জন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ১০ জন লেখাপড়া এবং নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি করতে ইচ্ছুক। এছাড়া ৪ জন চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য চান।