নিউজ ডেস্ক:
বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি চুক্তির সমাধানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকেই তাকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মমতার উদ্যোগেই এই সমস্যা মিটতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
গতকাল রবিবার কলকাতার মিলনমেলা প্রাঙ্গণে ৪১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ‘বাংলাদেশ দিবশ’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বন্ধুত্ব আছে সেটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিরাজ করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দুইজনেই বাংলাদেশ সফরে গিয়েছেন। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে এবং নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। অনেক অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান হয়েছে, তবে এটাই (তিস্তা) বা বাকী থাকবে কেন? তাছাড়া বাংলাদেশ এখনও তাকিয়ে আছে তিস্তার পানি সমস্যা সমাধানের দিকে। আমি মনে করি মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের পরম বন্ধু। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার যথেষ্ঠ ঘনিষ্ঠতা আছে। দুইজনের মধ্যে ভাল যোগাযোগ রয়েছে। তাই আমরা আশা রাখি যে তার উদারতায়, বন্ধুত্বে আমরা অচিরেই এই সমস্যাটিরও সমাধান করতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোন ক্ষেত্রেই কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। দুই দেশের মানুষের কল্যাণে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা একসঙ্গে বসে বকেয়া সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত’।
এদিন বিকালে বইমেলার এসবিআই অডিটোরিয়ামে নূর জানান, ‘এবারও আমরা কলকাতা বইমেলায় এসেছি তবে আমাদের আসাটা শুধু বইয়ের স্টল সাজিয়ে বসার জন্য নয়, কলকাতা বই মেলা আমাদের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। এখানে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ হয়। দুই পাড়ের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে আমাদের মেলবন্ধন তৈরি হয় এবং একটা সময় এটাই দুই দেশের মধ্যেকার ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে সাহায্য করবে’।
সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আসাদ্দুজামান নুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে। আমাদের দেশেও যারা স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারে নি-তারাই বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বুকে জঙ্গিবাদের জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনদিনই জঙ্গিবাদকে মেনে নেবে না। তাই এই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে দুই দেশের সরকার ও মানুষেরই উচিত একযোগে কাজ করা’।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সরা বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সঙ্গে বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে চাচ্ছে। তারই অঙ্গ হিসাবে এই বইমেলায় আমাদের অংশগ্রহণ’।
আসাদুজ্জামান নূর ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বাংলাদেশের নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ চুকমি, কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ, ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল, কলকাতা বুক সেলার্স এন্ড গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চ্যাটার্জি, কবি নুরুল হুদা,অলোক রঞ্জন দাশগুপ্ত প্রমুখ।
দুই বাংলার সুদৃঢ় সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে এনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে যে হৃদতা, সম্পর্ক তাতে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দুই বাংলার সম্পর্ক আক্ষরিক অর্থেই অত্যন্ত নিবিড়। আমাদের আলাদা দুই মানচিত্র থাকলেও কিংবা আলাদা কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও ভাষা ও সংস্কৃতির কারণে আমরা অন্তর থেকে কখনওই কোন পৃথক ভাবনা থেকে তাড়িত হইনি’।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘বাঙালি জাতি বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। আমাদের ভাষাই হল আমাদের গর্বের বিষয়। যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি। বাংলা ভাগের সময়কালে বাংলা ভাষা ধ্বংসের চেষ্টা চলেছিল, তখনই আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম, আর তখনই শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। সেই ভাষা এখন আর্ন্তজাতিক ভাষা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ভাষাটাকেই আমরা ঠিকমতো আত্মস্থ করতে পারি না, কখনও কখনও বিভিন্ন ভাষার মিশ্রণে জগাখিচুড়ি করছি’।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জানুয়ারি ৪১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করেন কোস্টারিকার বিশিষ্ট লেখক রোক্সানা পিন্তো লোপেজ। প্রতিবারের মতো এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ পদ্মাপারের বাংলাদেশকে ঘিরে। বইমেলা প্রাঙ্গণের একেবারে মাঝখানেই প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট জুড়ে সেদেশের দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের আদলে এবারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষ্যে এদিন বইমেলায় ‘বাংলাদেশের কবিতা’ শীর্ষক একটি সেমিনার ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আবৃত্তি করেন আসাদ চৌধুরী।