নিউজ ডেস্ক:
কিছুদিন আগে প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে গেছিল ভারতের কর্ণাটক। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে খেতের পেঁয়াজ। ফলে যে পেঁয়াজ এখন বাজারে আসার কথা ছিল, তা আসেনি। বৃষ্টিতে একইভাবে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে মধ্য প্রদেশ, গুজরাটের মতো রাজ্যেও। বৃষ্টি আরেকটা ক্ষতি করেছে। গুদামে রাখা পেঁয়াজে পানি ঢুকে গেছে। ফলে সেই পেঁয়াজও পচেছে।
তই যে পেঁয়াজ এখন পাইকারি বাজারে ১৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা, মহারাষ্ট্রে তা হচ্ছে ৩০ টাকায়। মহারাষ্ট্রের বাইরে আরো বেশি দামে। মহারাষ্ট্র হলো ভারতের পেঁয়াজ ভান্ডার। সব চেয়ে বেশি ও ভালো মানের পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এখানে। ফলে সেখানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা কেজি ছাড়াবার পরেই সোমবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ভারত সরকার।
কলকাতায় পেঁয়াজের একজন বড় আড়তদার জয়ন্ত ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘‘বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা প্রচুর, কিন্তু যোগান কম। বৃষ্টি ও বন্যা তার একটা কারণ ঠিকই, লকডাউনও বড় কারণ। লকডাউনের সময় মাঠে ফসলের কাজ করার লোক ছিল না। ফলে উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। যা হয়েছে, সেটাও ঠিকভাবে বাজারে নিয়ে আসা যায়নি।’’ তাই এখন যে অবস্থা হয়েছে, তাতে লকডাউনের কথাটা ভুলে গেলে হবে না।
দিল্লির পেঁয়াজ বিক্রেতা বিনিতও জানাচ্ছেন, বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি, যোগান কম। গত মে মাস থেকে এই গল্প চলছে। তিনি জানিয়েছেন, ”পেঁয়াজ উৎপাদনে মহারাষ্ট্রের পরে আছে কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলো। সেখানে বর্ষায় ফসল নষ্ট হয়েছে। পরের ফসল উঠবে নভেম্বরে। তাই পেঁয়াজের এত দাম।’’ দিল্লিতে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
কিন্তু তাই বলে আচমকা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো কেন? সূত্র জানাচ্ছে, ভারতীয় কৃষি মন্ত্রণলায়ের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট হলো, রপ্তানি চালু থাকলে আর এক দুই মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়ে যেত। এই রিপোর্ট পাওয়ার পর আর অপেক্ষা করেনি ভারত সরকার। সামনেই বিহার নির্বাচন। তখন দাম ৮০ টাকা কেজি হলে খোসাসর্বস্ব পেঁয়াজই বিজেপি-জেডিইউ জোটকে কাঁদিয়ে ছাড়ত। পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা কেজি হওয়ার পর দিল্লিতে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল বিজেপি-কে।
তারপর ১৫ বছর কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত এবং প্রায় ছয় বছর অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লি শাসন করছেন। বিজেপি আর ফিরে আসতে পারেনি। পেঁয়াজ যে কতটা কাঁদাতে পারে তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন দিল্লি বিজেপির নেতারা। তাই বিহারের কথা ভেবে পেঁয়াজের দাম কম রাখতে প্রয়োজনে তা আমদানি করবে মোদী সরকার, কিন্তু দাম আর বাড়তে দেবে না।
প্রবীণ বিজনেস রিপোর্টার জোসেফ জানিয়েছেন, ‘‘বিহারের নির্বাচনের জন্যই হঠাৎ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বাভাবিক সময় হলে হয়তো এখন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হতো না। আরেকটু অপেক্ষা করে দেখা হতো।’’
কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছাড়া কি অন্য পথ ছিল না? নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায় চৌধুরিবলেন, ”সরকারের উচিত ছিল সরকারি কৃষি বিপণন সংস্থা নাফেডের হাতে থাকা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া। সেই সঙ্গে পেঁয়াজের মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তা হলেই বাজারে পেঁয়াজ আসত। দামও কম থাকত। তা না করে, সহজ পন্থা নিয়ে রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল তারা।’’
এই সিদ্ধান্তে মহারাষ্ট্রের নেতারা ক্ষুব্ধ। ভারতের সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং সারা দেশে কৃষি নিয়ে যার অগাধ জ্ঞানের কথা সকলে স্বীকার করেন সেই শরদ পাওয়ার টুইট করে বলেছেন, ‘‘রপ্তানি বন্ধ করার হঠাৎ সিদ্ধান্ত ভারতের ভাবমূর্তিতে বড় আঘাত। আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের রপ্তানিকারী হিসাবে ভারতের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেল।’’
পাওয়ার বলেছেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানের সুবিধা হবে।’’ পাকিস্তান প্রচুর পেঁয়াজ রফতানি করে।
পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকেই মহারাষ্ট্রে রাস্তা অবরোধ শুরু করছেন কৃষক নেতা রাজু শেট্টি। মহারাষ্ট্র টাইমসের প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকে জানিয়েছেন, ‘‘রপ্তানি বন্ধ হলে কৃষকদের ক্ষতি। তারা বেশি দামে রপ্তানি করতে পারতেন। এখন কম দামে দেশের বাজারে পেঁয়াজ দিতে হবে। তাই রাজু শেট্টি সবসময় রফতানি বন্ধের বিপক্ষে।’’
এর আগে ভারত সফরে এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুরোধ করেছিলেন, ‘‘আপনারা পেঁয়াজরপ্তানি বন্ধ করলে আগে থেকে জানাবেন। না হলে বাংলাদেশ খুব অসুবিধার মধ্যে পড়ে। আগে থেকে জানলে সরকার আগাম কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে।’’
কিন্তু আবার হঠাৎ করেই রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল ভারত। শেখ হাসিনাও সম্ভবত আগাম ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ পেলেন না। ডয়চে ভেলে