স্টাফ রিপোর্টারঃ
শাপলা টিভি ডটকম, মানবতা টিভি ডটকম, চুয়াডাঙ্গা টাইমস ডটকম, দৈনিক ভৈরব ডটকম, দৈনিক দামুড়হুদা-দর্শনা ডটকম, দৈনিক চুয়াডাঙ্গার সময় ডটকম, রবি টেলিভিশন ডটকম, দৈনিক ঢেউ ডটকম, দৈনিক রাইসা ডটকম, জাগোদেশ ডটকম, আলমডাঙ্গা নিউজ ডটকম, সময়ের দাবি ডটকম, চুয়াডাঙ্গার চোখ ডটকম, দৈনিক গ্রামের বার্তা ডটকম, দৈনিক ক্রাইমনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, স্বপ্নবানী ডটকম। বলছিলাম চুয়াডাঙ্গায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালের কথা। যেগুলোর নেই কোনো রেজিস্ট্রেশন, নেই কোনো অফিস, তাঁদের খোঁজও জানে না প্রশাসন।চুয়াডাঙ্গায় এরকমই ৩০টিরও অধিক নিউজ পোর্টাল আছে। যাদের অধিকাংশরই সংবাদের নীতি বা গুণগতমান তো দূরের কথা, এসব অনলাইনের মালিক বা সম্পাদকের নাম, পরিচয়, ঠিকানা পাওয়ায় দুরূহ। রেজিস্ট্রেশনের জন্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, অফিসসহ চাহিদামাফিক জনবল, নিয়মিত বেতনভাতা প্রদান ও আবেদনকারীর টিন নম্বর প্রয়োজন। তবে এসবের কিছুই নেই এসব পোর্টালের।
জানা গেছে, মাত্র ৮০০ থেকে হাজার টাকায় ডোমেইন ও ২-৩ হাজার টাকায় হোস্টিং কিনে রাতারাতি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক, সম্পাদক, প্রকাশক, উপদেষ্টা, প্রধান সম্পাদক, চিফ রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার বনে যাচ্ছেন অনেকেই। একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, একজন ব্যক্তিই এখানে সব। তাদের নেই কোনো অফিস, নেই কোনো জনবল, আবার অনেকে করে থাকেন কার্ড ব্যবসা। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকের সঙ্গে জড়িত।
দেখা যায়, কোনো কোনো অনলাইনে নানান চটকদার শিরোনামের সম্মানহানী, বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক সংবাদের লিংকে ভরে যাচ্ছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এদের অনেকে উস্কানিমূলক সংবাদ প্রকাশ করে মদদ দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদকে। সংবাদের নামে প্রচার করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য, ছড়ানো হচ্ছে গুজব। অথচ এগুলোর নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংস্থাগুলোর দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই। বর্তমানে দৃশ্যমান তদারকিও নেই তথ্য মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি বা গোয়েন্দা সংস্থার। এ সুযোগে ইন্টারনেট হিটের জন্য বা উদ্দেশ্যমূলক বেপরোয়াভাবে সংবাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে বেশ কিছু অখ্যাত অনলাইন। সাংবাদিক নামধারী কিছু চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে শীর্ষ স্থানীয় নিউজ পোর্টাল ও পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার শুধুমাত্র কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে ১০ থেকে ১২টি নিউজ পোর্টাল আছে। যাদের নির্দিষ্ট কোনো অফিস পর্যন্ত নেই। কার্পাসডাঙ্গা সীমান্তবর্তী একটি ইউনিয়ন, বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্যই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হয়েছে এসব সস্তার নিউজ পোর্টালগুলো। একটি ইউনিয়নের মতো জায়গায় কী কারণে এতগুলো নিউজ পোর্টাল, এমন প্রশ্ন সবার মনে।
এছাড়াও সীমান্তবর্তী এলাকা দর্শনা-জীবননগরেও আছে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে চায়ের দোকানদার থেকে শুরু করে ইজিবাইকচালক পর্যন্ত সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছেন! যা সুস্থ সাংবাদিকতার অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। আবার খোঁজ নিলে দেখা যাবে একজন ব্যক্তি এখানে সবকিছু, তাঁদের নেই কোনো অফিস, নেই কোনো জনবল। অনেকেই করছেন কার্ড ব্যবসা। প্রায় দেখা যায়, কোনো না কোনো অনলাইনে নানা চটকদার শিরোনামের সম্মানহানি বিভ্রান্তিকর মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদের লিংকে ভরে ভরে যাচ্ছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। প্রচার করা হচ্ছে মিথ্যা, ছড়ানো হচ্ছে গুজব। সাংবাদিক নামধারী কিছু চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় কেন্দ্র হয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে জেলার বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যম ও পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীদের।
এই ধরনের নিম্ন শ্রেণির নিউজ পোর্টালগুলো মূলত আপত্তিকর ও ভুয়া খবর আর তিলকে তাল করে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য। অন্যদিকে ব্রেকিং নিউজ ছাপাতে এদের জুড়ি নেই। তাক লাগানো ঘটনা ঘটুক বা নাই ঘটুক, এরা তবুও ব্রেকিং নিউজ বানাবেই। কারণ এরা জানে এসব ভুয়া তাক লাগানো খবর পাঠককে আকৃষ্ট করে। সহজ-সরল পাঠকেরা এসব নিউজ বিশ্বাস করে ফেসবুকে তাঁদের নিজের ওয়ালে ওইসব নিউজ শেয়ার করে। সাধারণ পাঠকেরা জানেও না কীভাবে তাঁরা হলুদ সাংবাদিকদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন। তাই পাঠকদের এ বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রাজিব হাসান কচি বলেন, এসব ভুয়া অনলাইন পোর্টালের জন্য দুর্নাম হয় মূলধারার সাংবাদিকদের। আগে একাধিক মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী এখন দেখা যায় এসব অনুমোদনহীন অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক। সাংবাদিকদের এ নেতা অতিদ্রুতই এসব পোর্টালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এই সম্মানীয় পেশাটাকে যারা দুর্নামের মধ্যে নিয়ে আসছে আর সরকারি নিয়ম-নীতিও মানছে না, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। কঠোরভাবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে এসব পোর্টালকে বন্ধ আর ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, দাবি সচেতন সাংবাদিকদের।
দৈনিক প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি সাংবাদিক শাহ আলম সনি বলেন, বাংলাদেশ সংবাদপত্র প্রকাশনা আইনে স্থানীয় সংবাদপত্রের নিবন্ধন দেন জেলা প্রশাসক। জেলার কতগুলো নিবন্ধিত সংবাদপত্র আছে তা তিনি জানেন। তা ছাড়া বাংলাদেশ সংবাদপত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের তালিকাও আছে। সে জেলায় কতগুলো নিবন্ধিত, তা দেখে বাকি সব অনিবদ্ধিত পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের বিরুদ্ধে অতিদ্রতই ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনের। আইসিটি আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনে তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করা এখন অতিব জরুরি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি অথরিটি (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা, গুজব ও প্রপাগান্ডা ছড়ানো বেনামি অনলাইন পত্রিকা বা পোর্টালগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়শঃ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেকগুলোর প্রকাশনাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা অনলাইন সম্পর্কে বিটিআরসিকে অবহিত করলে তখনই সঙ্গে সঙ্গে বিটিআরসি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসলে পত্রিকার বিষয়গুলো জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব। সুতরাং উনি বা কোনো প্রতিষ্ঠান জানালে, আমি অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক। মিথ্যা আর বিভ্রান্তি কোনোভাবেই ছড়ানো যাবে না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বেশকিছু সাংবাদিক বারবার এ বিষয়টি বলছেন। আমি অতিদ্রুতই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’