দেশের জ্বালানি খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ১০ বছরে নিট ৫৬ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। তবুও জ্বালানি তেলের দাম কমছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে সহনীয় থাকায় বিপিসি কম দামে জ্বালানি তেল কিনে এনে চড়া দামে বিক্রি করছে। অবশ্য ঋণ সহায়তার জন্য জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর ব্যাপারে আইএমএফের চাপ রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো হলে দেশের মানুষ উপকৃত হতো বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মন্তব্য করে বলেছে, বিপিসি মুনাফা করলেও সাধারণ মানুষ কষ্টে রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের উৎপাদন এবং পরিবহনের সাথে জ্বালানি খাত নিবিড়ভাবে জড়িত। জ্বালানি তেলের মূল্য চড়া থাকায় পণ্য উৎপাদন এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়ছে। জ্বালানি খাতে খরচ সাশ্রয় করতে পারলে উৎপাদকেরা আরো কম দামে পণ্য সরবরাহ এবং পরিবহন করতে পারতেন; যা সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে উপকৃত হতো বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন সময় জ্বালানি তেলের মূল্য নিম্নমুখী এবং বছরজুড়ে সহনীয় থাকলেও তার প্রভাব পড়ে না দেশের জ্বালানি খাতে।
বিপিসি বিপুল মুনাফা করার জন্য তেলের মূল্য কমানোর সুযোগ থাকলেও কমায় না বলে অভিযোগ রয়েছে ভোক্তাদের। গত ১০ বছরে বিপিসি ৫৬ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করেছে। ১০ বছরের মধ্যে শুধু ২০২১–২২ অর্থবছর কিছুটা লোকসান দিলেও অন্যান্য বছরে বিপুল অর্থ লাভ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। বিপিসির দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে লোকসান এবং ভর্তুকি দিয়ে চালানো বিপিসি ২০১৪–১৫ অর্থবছরে বড় লাভের মুখ দেখে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় ওই বছর সংস্থাটি লাভ করে ৪ হাজার ১২৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। পরের ২০১৫–২০১৬ অর্থবছরে বিপিসির লাভ এক লাফে দ্বিগুণ হয়। ওই বছর সংস্থাটি লাভ করে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১৬–১৭ অর্থবছরে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৭–১৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা, ২০১৯–২০ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা মুনাফা করে। ২০২০–২১ অর্থবছরে বিপিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা হয়। ওই অর্থবছরে বিপিসি ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা লাভ করে। ২০২১–২২ অর্থবছরে সংস্থাটি লোকসান দেয় ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। পরের বছর আবার ঘুরে দাঁড়ায় বিপিসি। ২০২২–২৩ অর্থবছরে সংস্থাটি লাভ করে ৫ হাজার ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিপিসি লাভ করে ৪ হাজার ৮৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরের দুই মাসে এই লাভ ৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, অডিট সম্পন্ন না হওয়ায় বিপিসি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের লাভের অংক প্রকাশ করেনি।
গত অর্থবছরে লাভের অংক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও এই অংকসহ গত ১০ বছরে সংস্থাটির নিট মুনাফা দাঁড়াবে ৫৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিপুল মুনাফা করলেও দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমায়নি বিপিসি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উৎপাদন ও পরিবহন খাতে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এর ধকল সামলাতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। তারা বলেন, দেশে বর্তমানে ৭০ লাখ টনের বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ৭০ শতাংশের বেশি ডিজেল। ডিজেল দেশের উৎপাদন এবং পরিবহন খাতের প্রধানতম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এর মূল্যের ওপর অনেক কিছু নির্ভরশীল।