নিউজ ডেস্ক:
পাহাড়াদার, রক্ষক, সঙ্গী- নাহ্, কুকুর শুধু বন্ধু নয়। বরং মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বটাকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যায় নিবেদিতপ্রাণ এই প্রাণী। সভ্যতার শুরু থেকেই প্রতি পদে কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে মানুষ। আর তাই হাজার বছরের পুরোনো এই সম্পর্ককে আরো নিখুঁত করতে চেষ্টার ত্রুটি নেই মানুষের।
আকার আকৃতি, লোমের রং ও দৈর্ঘ্য, চোখের রং, পায়ের রকম, এমনকি লেজের ধরন থেকে শুরু করে নানা শরীরী পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য কুকুরকে নিয়ে কম গবেষণা হয়নি। শক্তি, বুদ্ধিমত্তা কিংবা বিশেষ কাজের জন্য উপযুক্ত হতে গিয়েই বৈজ্ঞানিক নানা গবেষণার ছুরি কাঁচির তলায় যেতে হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির কুকুরকে।
এসব পরীক্ষা, গবেষণা ও পরিশ্রমের ফলেই গবেষণাগারে জন্ম নিয়েছে নতুন বিভিন্ন জাতের কুকুর। জনপ্রিয়তা ও পরবর্তীতে এসব কুকুরের স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধিতে পরিবেশের সঙ্গে মিশে গেছে সহজাত ভঙ্গিমায়। তবে সত্যিই কি মানউন্নয়ন হয়েছে কুকুরের? সত্যিই কি মানুষের খেয়াল পূর্ণতা পেয়েছে? নাকি প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে সৃষ্টি করা এসব কুকুর সহ্য করছে অসহনীয় রোগ ভোগ বা যন্ত্রণা?চলুন জেনে নিই, এক জাতের সঙ্গে আরেক জাতের কুকুরের মিশ্রণ কিংবা গবেষণার সাহায্যে পরিবর্তিত তেমনই সব কুকুরের কথা, সঙ্গে জানা হবে এই প্রচেষ্টার ইতিহাসটাও।
বুল টেরিয়ারস্
১৮০০ সালের দিকে ইংলিশ টেরিয়ার এবং বুলডগের মিশ্রণে জন্ম নেয় কুকুরের এই নতুন প্রজন্ম। মূলত লড়াকু কুকুর তৈরির উদ্দেশ্যেই এই মিশ্রণ। তখনকার দিনে মানুষের বিনোদন খোরাক ছিল কুকুরের লড়াই। আর সেই লড়াই জিততেই মানুষ শুরু করে দুই জাতের কুকুরের মিশ্রণে নতুন যোদ্ধা কুকুর সৃষ্টির প্রক্রিয়া।
পার হয়ে গেছে প্রায় দু’শ বছর, বর্তমান সময়েও এই বুল টেরিয়ার কুকুর লড়াইয়ের জন্য বিখ্যাত। তবে নাকটা তেমন খাড়া নেই, পেটের দিকটাও অনেকটা চিকন। অবশ্য মজবুত মাথার আকার দেখলেই বোঝা যায়, উদ্দেশ্য বৃথা যায়নি।
বাসেট হাউন্ডস
জেনেটিক আকৃতিতে মানুষ নাক গলানোর আগে হাউন্ড জাতীয় কুকুরের কান কিছুটা ছোট ছিল, মুখটা এত বেশি ঝুলে যাওয়া ছিল না এবং পিছনের দিকটাও খুব বেশি নড়তো না।কিন্তু জিনগত বৈশিষ্ট্য কিছুটা বদলে ফেলার পর মুখের চামড়া আর কান দুটো ঝুলে গেছে বাসেট হাউন্ডের। পা কিছুটা ছোট হলেও দৈহিক আকার কিন্তু বেশ বেড়েছে।
বক্সারস্
বক্সার গোত্রীয় কুকুরের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য এসেছে ম্যাস্টিফ, বুলডগ, টেরিয়ারের মতো বিভিন্ন কুকুরের কাছ থেকে। মূলত শিকার আর গবাদি পশু রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তার উদ্দেশ্যেই এই জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের কুকুরের সৃষ্টি।বিভিন্ন কাজে উপযোগী বলে এই কুকুরের জনপ্রিয়তা প্রথম থেকেই। তবে বিভিন্ন গোত্রের বহুবিধ মিশেলে বর্তমানে অনেকটাই বদলে গেছে বক্সার কুকুরের চেহারা। ছোটখাটো চেহারা আর বিশাল মুখের জন্য দেখে মনে হয় কাজের কাজী, কিন্তু নানা রোগে ভোগেই কাটে জীবনকাল।
ডাচহাউন্ডস
ঘাড়, মাথা আর শরীরের তুলনায় পা কিছুটা ছোটই ছিল এই জাতের কুকুরের, তবে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অন্য কুকুরের সঙ্গে তেমন পার্থক্য ছিলনা। জেনেটিক গঠনে মানুষের দৃষ্টি পড়তেই আমূল বদলে গেল ডাচহাউন্ডস কুকুরের আকার আকৃতি।মাথা থেকে লেজ- দূরত্ব বেড়ে গেল বেশ খানিকটা। সঙ্গে পাগুলো ছোট হয়ে গেল, মাত্র কয়েক ইঞ্চি লম্বা পা দিয়েই জীবন যুদ্ধে লড়তে হয়ে এই কুকুরের। পোষ্য হিসেবে জনপ্রিয় হলেও মেরুদন্ডের ব্যাধিতে ভূগতে হয় নতুন এই জেনেটিক গঠনের কারণে।
জার্মান শেফার্ড
জেনেটিক গঠন পরিবর্তনের ভূত মানুষের মাথায় চাপার আগে জার্মান শেফার্ড চিকন পেট, মেদহীন শরীর আর শক্তিধর মাথার অধিকারী ছিল।কিন্তু বর্তমানে জনপ্রিয় এই কুকুরের চেহারা ভিন্ন। ভেড়ার সঙ্গে সংমিশ্রণের ফলে বেশ লোমশ শরীর, মোটা লেজ, ভারী মাথা আর শক্তির প্রতীক জার্মান শেফার্ড।
পুগস
চীনের হ্যাপা কুকুরের বংশধর এই পুগস। ছোটখাটো সাইজ আর মায়াবী চেহারার কারণে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় হয় ডাচ ম্যাস্টিফ নামে পরিচিত এই কুকুর। পরবর্তীতে টেরিয়ার এবং অন্যান্য ছোট কুকুরে সঙ্গে মিশ্রন ঘটে চীনের এই আদিবাসীর।সংমিশ্রণের ফলে মুখের কুঁচকে যাওয়া চামড়া আর ছোট আকার নিয়ে আরো বেশি জনপ্রিয় হলেও মানুষের গবেষণার কুফল প্রতি মুহূর্তে ভোগ করে পুগস। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন স্বল্পতা, দূর্বল হৃদপিন্ড, উচ্চ তাপমাত্রাসহ চামড়ার সমস্যায় ভুগতে হয় এই কুকুরকে। শুধু তাই নয়, গুটিয়ে রাখা যে লেজটি দেখে আপাত দৃষ্টিতে সুন্দর মনে হয়, সেটি আসলে পুগস জাতীয় কুকুরের প্যারালাইসিসের কারণ হতে পারে।
সেইন্ট বার্নার্ডসসেইন্ট বার্নার্ড কুকুরের পূর্বসূরীরা রোমান সৈন্যদলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হতো। উদ্ধারকর্মী হিসেবে টানা কাজ করতে পারতো শক্তিধর অথচ মায়াবী এই কুকুর।শখের পোষ্য হিসেবে পেতে মানুষের খেয়ালী গবেষণার শিকার হয়ে বর্তমানে এনট্রোপিয়ন, একট্রোপিয়ন, প্যারালাইসিস, হেমোফিলিয়া, ফিব্রিনোজেন ডেফিসিয়েন্সি, উচ্চ তাপমাত্রাসহ নানা রোগের রোগী সেইন্ট বার্নার্ডস কুকুর।
ইংলিশ বুলডগস
বলা হয়ে থাকে, পূর্বপুরুষের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য তৈরি হয়েছে ইংলিশ বুলডগের, অবশ্যই গবেষণাগারে। ছোট মাথা ও চ্যাপ্টা মুখের সঙ্গে মানানসই শরীর নিয়ে অ্যাথলেট এই কুকুর গবাদিপশুর রক্ষণাবেক্ষণে মালিককে সাহায্য করতে ব্যবহৃত হতো। শিকার কিংবা কুকুর লড়াইয়ের মতো বিনোদনেও সমান অংশগ্রহণ ছিল এই কুকুরের।কিন্তু গবেষণার ফলাফলে এবং কালের বিবর্তনে ইংলিশ বুলডগ প্রায় চামড়ার স্তুপ। ঝুলে পড়া চামড়া শরীর এবং চেহারা আবৃত করে রাখে। এই কুকুরকে রোগের ঘাঁটিও বলা যায়, এমন কোনো রোগ নেই যাতে ভুগতে হয়না এই কুকুরকে।