নিউজ ডেস্ক:
দাঁতের ক্ষয় বাচ্চাদের এক অতি সাধারণ সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ২৮% বাচ্চার, বিশেষ করে ২-৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের দাঁতের ক্ষয় বা একটা অন্তত গর্ত বা ক্যাভিটির সমস্যায় ভোগে। মাড়ি থেকে একটা দাঁত গজালেই বাবা মায়ের চিন্তা শুরু সেটার যত্ন নিয়ে।
এটা একটা ভুল ধারণা যে অন্তত চারটি দাঁত না গজালে যত্নের অত প্রয়োজন হয় না। যত ছোট বাচ্চাই হোক না কেন, যত্ন তার নিতেই হবে। ছোট্ট, ছোট্ট দাঁত ও জিভ, নরম ভেজা কাপড় দিয়ে পরিস্কার করা দরকার। কিন্তু অনেক সময় এটাই যথেষ্ট নয়, তার মূল কারণ হল ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত সমস্যা। বাচ্চার শরীরে প্রয়োজনীয় মাত্রায় ক্যালসিয়াম না থাকলে এরকম হয়। তাই যেসব মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের আলাদা করে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে বলা হয়।
অল্প বয়সের বাচ্চাদের এসব চিকিৎসা যাতে না করতে হয় সেটাই ভাল। তাই চেষ্টা করা উচিত যে বাচ্চাদের যাতে দাঁতের এরকম সমস্যা না হয়। বাবা মায়েদের সব সময় তাই খেয়াল রাখা উচিত যাতে বাচ্চারা সুস্থ থাকে ও দাঁত পরিস্কার থাকে। দাঁতের রোগ এমন এক সমস্যা যেখানে কিছু ক্ষারীয় বস্তু থেকে কিছু ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি ঘটে ও দাঁতের বাইরের স্তর বা এনামেলটা নষ্ট করে দেয়। আস্তে আস্তে এই নষ্ট হয়ে যাওয়া স্তর থেকে গর্ত বা ফুঁটো সৃষ্টি হয়।
বাচ্চাদের দাঁতের ক্ষয়ের কারণ:
খাবার দাবারের ধরণ ওপরে অনেকটা নির্ভর করে দাঁতের সমস্যা। আজকাল বাচ্চারা খুব বেশি মাত্রায় চিনি বা ক্ষারীয় পদার্থ খেয়ে থাকে, যা দাঁতের বেশ ক্ষতি করে। আপনার বাচ্চাকে ওসব খাওয়া থেকে আটকান তো সম্ভব নয়। কিন্তু যেটা করতে পারেন, সেটা হল এসব খাবার পর দাঁতের সম্পূর্ণ যত্ন নেওয়া। চিনিযুক্ত পানীয় দাঁতের যথেষ্ট ক্ষতি করে। এমনকি শারীরিক আরও কিছু অসুস্থতা, যেমন এ্যালার্জি থেকেও দাঁতের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়ে।
চিহ্ন বা লক্ষণ:
হ্যাঁ,বাবা মা হিসেবে আপনার জানা উচিত যে বাচ্চার দাঁতের ক্ষয়ের লক্ষণগুলো কি কি! প্রতিটি বাচ্চার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো এক নয়। কারোর ক্ষেত্রে হয়ত নিশ্বাসে দুর্গন্ধ, আবার অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চার খেতে বা খাবার চিবোতে অসুবিধে হচ্ছে। অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে দাঁতের রঙ পালটে যায়। আপনি যদি এর মধ্যে কোন লক্ষণগুলো দেখে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিকার:
এবার এখন প্রশ্ন হল,কি করে দাঁতের ক্ষয় আটকাবেন? বাচ্চাদের এই সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা করার দুটো মূল উপায় আছে। প্রথম উপায় হল, দাঁত ও মুখের সঠিক যত্ন নেওয়া। দিনে অন্তত যেন দুবার দাঁত মাজে আপনার বাচ্চা। দুই হল, খাওয়ার ধরণটা পালটানো। যদি দাঁতের কোন সমস্যার লক্ষণ দেখেন, তাহলে প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত মাজার অভ্যেসটা করান। আপনার সন্তানকেও দাঁতের যত্ন নেওয়ার যথেচ্ছ শিক্ষা শুরু থেকেই দিন।
চিকিৎসা:
ডাক্তারের কাছে গেলেই তাঁরা বাচ্চাদের দাঁতের ক্ষয়ের জন্য অনেক চিকিৎসা বলবেই। ফ্লোরাইড দিয়ে চিকিৎসা, গর্ত ভরাট করা, রুট ক্যানাল, দাঁতের ওপরের ক্যাপ বা ক্রাউন। এগুলো সবই খুব যত্নের সাথে করতে হয়, ২-৩ বার ডাক্তারের কাছে গিয়ে করা ভাল। পুরো পদ্ধতির সময় ধরে বাচ্চার বসে থাকাটা একটা কঠিন ব্যাপার। তাই আমরা বলি, চিকিৎসার পর্যায় যাওয়ার আগে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা রাখা ভাল।
স্বাভাবিক প্রতিকার:
আপনার বাচ্চা যদি দাঁতের ক্ষয় বা দাঁতের গর্ত (ক্যাভিটি) সমস্যায় ভোগে, তাহলে অবশ্যই এক দাঁতের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। কিন্তু তার সাথে কিছু স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলো চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। লবন পানি দিয়ে মুখে কুলি করা, হলুদ, লবঙ্গ, রসুন ও দারচিনির তেল, এগুলো খুবই প্রচলিত ঘরোয়া উপষমের উপায়। এগুলো বাচ্চাদের জন্য করাও সোজা এবং আরামদায়ক হবে। এবং সবচেয়ে ভাল কথা, এগুলোর কোন ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। একটা সুন্দর হাসি, দাঁতের স্বাস্থ্যের পরিচয়। তাই বাচ্চাদের দাঁতের যত্ন নেওয়া খুবই দরকার।