বিশ্বের মানুষের মঙ্গল কামনা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ প্রার্থনা
নিউজ ডেস্ক:বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গতকাল মঙ্গলবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। আনন্দ-উৎসব এবং নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায় পালন করেছে এই বিশেষ দিনটি। এ উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হয়, রাখা হয়ছ খাবারের আয়োজন। এই দিনে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া, মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার করতে তার আগমন ঘটেছিল। বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার গির্জায় গির্জায় আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থনার। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার ছিল সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব গির্জাসহ খ্রিষ্টান পরিবারগুলো ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে, কেক তৈরি করে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিনটি উদযাপন করছে। শিশুদের মধ্যে উপহারসামগ্রী বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় সান্তা ক্লজ। বড়দিন উপলক্ষে দেশের সব গির্জায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনে গোশালা স্থাপন এবং রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে। সারাদেশের ন্যায় প্রার্থনা, পাপমুক্তি, মঙ্গল কামনা, আর আনন্দ-উদ্দীপনায় বর্ণিল আয়োজনে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা ও মেহেরপুরের মুজিবনগরে পালিত হয়েছে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ২৫ ডিসেম্বর দামুড়হুদা উপজেলায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে উৎবসমুখোর পরিবেশে শুভ বড়দিন পালিত হয়েছে। বড় দিন উপলক্ষে প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে এ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর মানুষ। এসব কর্মসূচির মধ্যে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা এবং বেলা ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত র্চাচ অফ বালাদেশ এবং ক্যাথলিক গীর্জাগুলোতে প্রার্থনা, বাড়িতে বাড়িতে গোশালাগুলোতে যিশু ও মাতা মরিয়মের পুতুল দিয়ে এবং ক্রসসহ রঙ্গীন বেলুন, নানা রং এর কাগজের ফুল দিয়ে সাজিয়েছে, একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়। এছাড়া গীর্জাগুলোকে ঘিরে মেলা বসেছে। সারা বিশ্বের সকল খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ ধর্ম বর্ণের মানুষে মধ্যে সৌর্হাদ ও সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য গীর্জায় গীর্জায় প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া গীর্জাগুলোতে নানা রকমের ফুল, বেলুন ও আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ক্রাইষ্ট র্চাচের সহকারী ফাদার জানান, কার্পাসডাঙ্গায় ক্যাথলিক গীর্জার খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের ১৭০টি পরিবার এবং র্চাচ অব বাংলাদেশের ১৩০টি পরিবার বসবাস করে। এছাড়া দর্শনা ও দামুড়হুদায় প্রায় শতাধিক খ্র্রিষ্টান পরিবার বসবাস করছেন। গীর্জাগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বড় দিনকে ঘিরে কার্পাসডাঙ্গা অঞ্চলে বর্ণিল সাজে সেজেছে।
মুজিবনগর অফিস জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে সারাদেশের মত মেহেরপুরের মুজিবনগরেও প্রার্থনা, পাপমুক্তি, মঙ্গল কামনা, আর আনন্দ-উদ্দীপনায় বর্ণিল আয়োজনে পালিত হলো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। আজ থেকে ২ হাজর বছরের বেশি আগে এ দিনে যিশু খ্রিষ্টের জন্মগ্রহন করেন। এ দিনটিকে যিশুর জন্মদিবস বা বড়দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছরের ২৫ ডিসেম্বরকে সম্মান জানিয়ে বড়দিন হিসেবে উদযাপন করে থাকে পৃথিবীব্যাপী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। এটি তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। তাই এই উৎসব যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মতো মুজিবনগরেও শুভ বড়দিন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। ‘খ্রিষ্ট প্রভূ এসেছেন আজ মোদের এ ধরণীতে, শান্তির আলো জ্বেলেছেন আজ শান্তি মোদের দিতে’- এ সঙ্গীতের সুরে গীর্জায় সকাল ৮টায় প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু হয় শুভ বড়দিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা। মুজিবনগর উপজেলার সবথেকে বড় গীর্জা ভবেরপাড়া মিশন চার্চের ফাদার বাবুল বৈরাগী বাণী পাঠ ও বিশ্লেষণ করে শোনান পুণ্যার্থীদের। তিনি সারা বিশ্বের মানুষের মঙ্গল কামনা করেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এদিকে সকাল থেকে কয়েক দফা প্রার্থনা করেন পুণ্যার্থীরা। উক্ত পার্থনায় হাজার হাজার পুণ্যার্থী অংশ নেন। এ সময় গীর্জার ভেতরে ও বাইরে ছিল খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রাথর্নায় দেশ, জাতি, মানবের মঙ্গল ও মিলন কামনা করে বলা হয়, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বড়দিন সবার। এদিনে ঈশ্বর আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করতে এসেছিলেন। তিনি সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে মিলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইউপি সদস্য শংকর বিশ্বাস জানান, যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল আটটা থেকে মোট তিন দফা পার্থনা করা হয়। উক্ত পার্থনায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হয়।