আলমডাঙ্গায় শাশুড়ি হত্যাকান্ডের ঘটনা : চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের বিচক্ষণতা
অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল ও ইউপি সদস্য
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
আলমডাঙ্গায় বিধবা ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাশুড়ি খুনের ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় পলাতক খুনি জামাই সিআইডি কনস্টেবল অসীম ভট্টাচার্যকে আটক করেছে চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের একটি টিম। ঘাতকের ছুরিকাঘাতের ভয়কে উপেক্ষা করে গতকাল বুধবার বিকেল চারটার দিকে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ঘোড়ামাড়া ব্রিজ এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। খুনি অসীম ভট্টাচার্য খুলনার দৌলতপুরের মৃত দুলাল ভট্টাচার্যের ছেলে। তিনি চুয়াডাঙ্গা সিআইডি বিভাগে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, গতকাল বুধবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কে ঘোড়ামারা ব্রিজ এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়েছিল চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের একটি টিম। ওই চেকপোস্টে ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসসহ চারজন কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন, তোয়াক্কেল, ইসাহাক ও আকরাম হোসেন দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় হেলমেট পরিহিত, মুখ বাঁধা ও প্যান্টের ওপরে লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল নিয়ে আলমডাঙ্গা দিকে যাওয়ার সময় সন্দেহ হলে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাঁর গতি রোধ করেন। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল তোয়াক্কেল মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চাইলে অসীম নিজেকে ডিবি পুলিশের সদস্য বলে পরিচয় দেন। তখন কর্মরত কনস্টেবল তোয়াক্কেল ও জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁকে সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এসময় সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় কনস্টেবলদের কাছে এগিয়ে আসেন এবং ঘাতক অসীমকে পুলিশ সদস্য হয়ে মুখ বেঁধে প্যান্টের ওপর লুঙ্গি পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি নিজেকে এবার সিআইডি বলে পরিচয় দেন। সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় অসীমের এলোমেলো কথা কথা শুনে উপস্থিত কনস্টেবলদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইনি কি সেই পলাতক সিআইডি সদস্য নাকি?’ মৃত্যুঞ্জয় এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আসামি অসীম ভট্টাচার্য মোটরসাইকেল রেখে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
অসীম পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয়সহ উপস্থিত কনস্টেবলরা তাকে ধাওয়া করে আটক করেন। আটক অসীম পেটে ব্যাথার কথা বলে নিচের দিকে একটু ঝুঁকে তাঁর পায়ে বিশেষ কায়দায় রাখা ধারালো দেশীয় ছুরি বের করে উপস্থিত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের আঘাত করার চেষ্টা করেন এবং আবার পালানোর জন্য দৌঁড় দেন। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের ওই চেকপোস্টে মোটরসাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে থাকা চুয়াডাঙ্গা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিজানুর রহমান নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশীয় ধারালো ছুরি হাতে থাকা অসীমকে দৌড়ে গিয়ে পেছন দিক থেকে ঝাপটে ধরেন। এ সুযোগে পুলিশ সদস্যরা অসীমের হাতের ছুরিটি কেড়ে নেন। এ সময় ধস্তাধস্তিতে খুনি অসীম আহত হন।
খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অসীমকে আহত অবস্থায় আটক করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। খুনি অসীম ভট্টাচার্য আটকের খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে উস্থিত হন। তাৎক্ষণিকভাবে সাহসিকতার পুরস্কার স্বরূপ ওই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ২ হাজার ৫০০ টাকা পুরস্কার দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অসীম ভট্টচার্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খাঁন জানান, গত শনিবার গভীর রাতে শাশুড়িকে হত্যার পর থেকে পলাতক ছিলেন অসীম। তাঁকে আটক করতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছিল। গতকাল বিকেলে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়ক দিয়ে আলমডাঙ্গামুখী যাওয়ার সময় চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের চৌকস ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসসহ ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা অসীমকে আটক করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার জানান, বুধবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সড়কে বিশেষ চেকিং অভিযান চলছিল। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ঘোড়ামারা ব্রিজের নিকটবর্তী স্থানে লুঙ্গি পরিহিত, মাথায় হেলমেট ও মুখ বাঁধা অবস্থায় অসীম ভট্টাচার্য মোটরসাইকেলযোগে আলমডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁকে সিগনাল দিয়ে থামানো হলে তিনি নিজেকে ডিবি পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেন। তখন উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সন্দেহ হলে তাঁর কাছে পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। তিনি নিজেকে এবার সিআইডি পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেন। পুলিশ সদস্যরা তখন বুঝতে পারেন, এই সেই শাশুড়ি হত্যাকারী অসীম ভট্টাচার্য। অসীম এ সময় দৌড় দিলে ট্রাফিক পুলিশের লোকজন প্রায় এক কিলোমিটার ধাওয়া করে একটি আমবাগান থেকে তাঁকে আটক করেন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ভোরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের মাদ্রাসা পাড়ার ভাড়াবাসাতে শাশুড়ি শেফালী অধিকারীকে ছুরিকাঘাতে খুন করেন চুয়াডাঙ্গা সিআইডিতে কর্মরত কনস্টেবল অসীম ভট্রাচার্য। একই সঙ্গে স্ত্রী ফাল্গুনী অধিকারী ও আনন্দ অধিকারীকেও খুনের উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে জখম করেন। পরে তাঁদের দুইজনকে উদ্ধার করে প্রথমে কুষ্টিয়া আড়াই শ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁদেরকে রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন অভিযুক্ত অসীম ভট্টাচার্য। অবশেষে ঘটনার পাঁচ দিন পর পুলিশ হাতে আটক হলেন ঘাতক অসীম।