নিউজ ডেস্ক:
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্ধারিত সময়ের আগে সংশোধিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার চিন্তা করছেন তিনি।
সাধারণত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ নিয়মের ব্যত্যয় হবে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে দল থেকে সিদ্ধান্ত হলে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গত শনিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী জানান, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখার কারণে রাজস্ব আদায়ে অনেক সমস্যা হবে। এ সমস্যা দূর করার জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ঠিক রেখে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ পরিবর্তন করতে হবে। আর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাজেট সংশোধন করা হবে। রাজস্ব আদায়ে ভ্যাট আইনটি অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভ্যাট থেকে ৯১ হাজার কোটি টাকা আসবে, এটা ধরে ৪ লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ভ্যাট আইন নিয়ে সংসদের বাইরে এবং ভেতরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। এ অবস্থায় ভ্যাট আইন কার্যকর দুই বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছে। ফলে ভ্যাট থেকে রাজস্ব ২০ হাজার কোটি কম আসবে বলে তার ধারণা।
ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা ? এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, না এমন কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নানা কারণে তা বাস্তবাযন করতে পারিনি। ২০১৭ সালেও পারলাম না। কিন্তু সে কারণে আইএমএফের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা আমাদের নিজস্ব বাস্তবতায় ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে কেন?
ভ্যাট আইন স্থগিত করায় রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি হবে, সেটা কীভাবে পূরণ করার চিন্তা করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেটে আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এখন রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস হবে আয়কর ও করপোরেট কর।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছরই যে বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয় তা কোনো বছরেই সম্পূর্ণভাবে অনুমোদন পায় না। সংসদে আলোচনা এবং সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছরই কিছু না কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তবে এ বছর কিছুটা সমস্যা হবে। তবে এ নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত নই।
তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর বিদ্যমান শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হারেই বহাল থাকছে, জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের দাম কমে গেছে। রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর আগেরটিই রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসআরও জারি হয়েছে।
বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্যরা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমানোর কথা বলেছেন। এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি আছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ কমিটির বৈঠক হবে। বৈঠকে সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না যাতে পেনশনভোগী এবং মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সঞ্চয়পত্রের সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা তারা যাতে পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এবং ব্যাংক ইন্টারেস্টের হারের মধ্যে বেশ ব্যবধান আছে। এটা সমন্বয় করা হবে। বৈঠকে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় সংস্থা তাদের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে এ খাত থেকে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় সঞ্চয়পত্র চালু হলেও এর বেশিরভাগ সুবিধা তারাই ভোগ করছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ওই সব সংস্থার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রদেয় সুদের হার কমানোরও ইঙ্গিত দেন। পেনশনভোগী, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে নজর রাখার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় তিনি ইউনিভার্সাল সেভিং সার্টিফিকেট চালুর পরিকল্পনার কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ড ছাড়ছে। এ বিষয়ে তারা সরকারি সহায়তা চাইলে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বড় বড় যে প্রতিষ্ঠান দেশে গড়ে উঠছে, এসব প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করা। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে হলেও এটা চালু হওয়া উচিত।
অর্থমন্ত্রী জানান, যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পেনশন ব্যবস্থা চালু করবে, তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়ার চিন্তা করবে সরকার। এ বিষযে খুব শিগগির একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।