নিউজ ডেস্ক:
দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ ও অভিযান পরিচালনার চাপে চালের দাম এক ধাপ কমিয়ে থেমে গেছেন দেশীয় মিল মালিকেরা।
বিক্রেতারা জানান, ২০ সেপ্টেম্বরের দিকে মিল মালিকেরা প্রথম ধাপে চালের দাম বস্তায় দেড়শ টাকার মতো কমিয়েছিলেন। পরের সপ্তাহে কমেছে আরো ২৫ টাকা। এরপর চালের দাম আর কমেনি।
এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন ফসল উঠে আসায় চালের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে মিল গেটে গত এক মাসে চালের দাম বেশ কমেছে। তবে রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামের লোভে অনেক চাল মজুদ রেখেছেন। এসব মজুদদার ব্যবসায়ী নতুন চাল না কিনে তুলনামূলক বেশি দামে কেনা আগের চাল বিক্রি করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি পর্যায়ে চালের শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে পণ্যটির দাম কমেছে সামান্য। সরকারের পক্ষ থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি হলেও দাম তুলনামূলক বেশি।
এ ছাড়া খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া চালের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এতে সরকারের ওএমএস কার্যক্রম চালের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। চালের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসায়ীরা চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিক ব্যাগে পরিবহন, ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে অব্যাহতিসহ বেশকিছু সুযোগ নিয়েছেন। এ প্রতিশ্রুতিও রাখেননি ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের পরই চালের দাম কমেছে। তবে দাম কিছুটা কমার পর তা স্থির হয়ে গেছে। আর কমছে না।
এ বিষয়ে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম যথেষ্ট কমেছে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে খুচরা ব্যবসায়ীরা চালের দাম কমাননি। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম সামান্য কমেছে। বেশি দাম দিয়ে কিনে এনে খুচরা পর্যায়ে দাম কমানোর সুযোগ নেই বলে তারা জানান।
এদিকে শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এলাকা ভেদে খুচরা বাজারে এখনো মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। আর পাইকারিতে এই চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকায়।
ফলে মিনিকেটের খুচরা মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, আর পাইকারি মূল্য ৫৮ টাকা। কোরবানির ঈদের পর গুজব ও কারসাজিতে হঠাৎ চলের দাম বেড়ে যায়। আগে এই মিনিকেট বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়।
বাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি যাচাই করে দেখা যায়, মিনিকেটর মতোই বিআর আটাশ ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। খুচরায় বিআর আটাশ ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা, আর পাইজাম ২ হাজার ৫০০ টাকা করে।
তবে বাজারে ভারতীয় চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় মানুষ কিছুটা কম দামে মোটা চাল পাচ্ছে। ভারতীয় মোটা চালের ৫০ কেজির বস্তা এখন ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা। ভারতীয় আটাশ চালও ২ হাজার ৩৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, খুচরায় মিনিকেট কেজি প্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা, ভারতীয় আটাশ চাল ৪৭ টাকা, দেশি আটাশ চাল ৫৪ টাকা এবং ভারতীয় মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫৪ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ এক মাসের তথ্যে আরো দেখা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর এক মাসের একটু বেশি সময় ধরে ৪৪ থেকে ৫২ টাকার মধ্যেই ওঠানামা করেছে মোটা চালের দাম। প্রায় এক মাস আগে চিকন চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। তা এখন চিকন চাল বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৮ টাকায়। মাসজুড়ে চিকন চালের দামও ওঠানামা করেছে।