মু.ওয়াছীঊদ্দিন,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ- ‘গতকাল স্কুলে বসে হেড স্যার আবুল হোসেন আমাকে অনেক মেরেছে। মারতে মারতে স্যার আমাকে বলছিলেন দুই মাসের কোচিংয়ের টাকা কই? আমি টাকা দুই দিন পরে দেব বললে, লিটন স্যার আমাকে বলেন তোর মা নাই, বাবা নাই, তুই গরিব, তোর ফুটপাতে থাকা উচিত, তুই স্কুলে কেন পড়ছিস? তোর স্কুলে পড়ার কোনো অধিকার নাই। এরপর স্যার আমার চুলের মুঠি ধরে আরও মারতে থাকে। এক পর্যায়ে দেয়ালের সঙ্গে আমার মাথা ধরে আঘাত করে। তারপর আমি আর কিছু বলতে পারবো না।’
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) সকালে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের বেডে আঘাতের যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কথাগুলো বলছিল ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছোয়ামনী।
সে লক্ষ্মীপুর শহরের বালিকা বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সদর উপজেলার মধ্য বাঞ্চানগর গ্রামের কিরণ আহমেদের মেয়ে।
এর আগে সোমবার (৩০ জুলাই) লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ দুই মাসের কোচিং ফির টাকার জন্য শিক্ষার্থী ছোয়ামনীকে মারধর করে আহত করে।
আহতের সহপাঠী ও স্বজনরা জানায়, প্রতিবছরই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ভাবে কোচিং করিয়ে থাকেন। কেউ অপারগতা জানালে তাকে মারধরসহ পরীক্ষায় ফেলও করানো হয়। ওই ঘটনার সময় ছোয়ামনী কোচিং ফির টাকা দিতে দুই দিনের সময় চায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক টাকার জন্য তাকে মরধর করে আহত করে। এ সময় শিক্ষার্থী অচেতন হয়ে পড়লে প্রধান শিক্ষক তড়িঘড়ি করে দ্রুত শিক্ষার্থীর স্বজনদের ডেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে শিক্ষার্থীর জ্ঞান না ফিরলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে চিকিৎসার পর শিক্ষার্থীর জ্ঞান ফিরে আসে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জয়নাল হোসেন জানান, আহত শিক্ষার্থী ছোয়ামনীকে ২৪ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে তার অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসার পর তার সুস্থতার কথা বলা যাবে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, ‘লিটন চন্দ্র দেবনাথ ছাত্রীর চুলের মুঠি ধরে মারধর করেছে বিষয়টি সত্য নয়। এটা সম্পূর্ণ একটা ষড়যন্ত্র। যে কেউ শিক্ষার্থীকে শিখিয়ে দিয়ে আমাকে, আমাদের লিটন স্যার ও বিদ্যালয়কে হেয় করার জন্য এটি সাজিয়েছে।
এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেনের ফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।