নিউজ ডেস্ক:
জার্মানির হামবুর্গে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের শুরুতেই করমর্দনের মধ্যদিয়ে প্রথম সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।গতকাল শুক্রবার সকালে সম্মেলনের প্রথম দিনেই দুই নেতা প্রাথমিক একটি বৈঠক করেন।
পরে তারা দীর্ঘ সময়ের আরেকটি বৈঠক করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগসহ ইউক্রেন, সিরিয়া সংকট নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ক মেরামত করতে চান দুই নেতা। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আলাদা বৈঠক করেন।
রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী জি-২০ সম্মেলনের এবারের আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাণিজ্য ইস্যু।
রাশিয়ার গণমাধ্যম বলেছে, ট্রাম্প এবং পুতিনের বিকেলে আধঘণ্টা বৈঠক করার কথা রয়েছে। যদিও অন্যান্য কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ বৈঠক ৩০ মিনিট হতে পারে। তবে বৈঠকের ব্যাপারে তারা পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন কি-না তা জানানো হয়নি।
গত জানুয়ারি এবং মে মাসে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের পর ক্রেমলিন এবং হোয়াইট হাউজ থেকে তাদের বক্তব্যের সারাংশ প্রকাশ করা হয়েছিল। এবারের জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকে দুই নেতা প্রধান কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিজেদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন সংবাদদাতারা।
এর আগে বৃহস্পতিবার জার্মানি সফরের প্রাক্কালে পোল্যান্ড সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেইনকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ করেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি রাশিয়াকে দায়িত্বশীল দেশগুলোর কাতারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
জার্মানির হান্ডেসব্লাট পত্রিকায় জি-২০ সম্মেলনের আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করে পুতিন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিরুদ্ধে আরোপিত মার্কিন-নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানান।
পুতিনও প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পক্ষে যুক্তি দেখান এবং এর বাস্তবায়নে পুরোপুরি অবদান রাখতে চান।
এদিকে, সিরিয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটন কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। অন্যদিকে, মস্কো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রধান মিত্র। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাছাড়া ওয়ারশের ভাষণে ট্রাম্প যে ভাষায় রাশিয়ার সমালোচনা করেছেন তাতে বোঝা যায়, পুতিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার রাজনৈতিক বিপত্তিটা তিনি বুঝতে পেরেছেন।
রশিয়ার গণমাধ্যম ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক থেকে তেমন কিছু হওয়ার আশা করছে না। আর একজন পর্যবেক্ষক ফায়োদোর লুকানোভ রোসিয়াকায়া গেজেটায় লিখেছেন, পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে না যায় সেটিই মূল বিষয়।
সর্বশেষ যে মার্কিন নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন ট্রাম্প সেই নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখনও তদন্ত চলছে। তবে দুই পক্ষই শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ওয়ারশতে এক বক্তৃতায় ট্রাম্প আহ্বান জানিয়েছেন, রাশিয়া যেন তাদের অস্থিতিশীলতা তৈরির কাজগুলো বন্ধ করে এবং সিরিয়া ও ইরানকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করে। এমন বক্তব্য দেয়ার পর অন্তত একজন রিপাবলিকানের প্রশংসা কুড়িয়েছেন ট্রাম্প।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করে আসা রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পর বলেছেন, মার্কিন বৈদেশিক নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা সপ্তাহের শুরুটা খুব ভালো হলো।
এদিকে ওবামা প্রশাসনের আমলে মেরিল্যান্ড ও নিউ ইয়র্কে জব্দকৃত দুটি রুশ কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেয়ার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা করছে- এমন খবরে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন তিন মার্কিন সিনেটর।
রিপাবলিকান সিনেটর জনি আইজ্যাকসন এবং মার্কো রুবি এবং ডেমোক্রেটিক সিনেটর জিন শাহীন চিঠিতে বলেছেন, সম্পত্তিগুলো ফেরত দেয়া হলে পুতিন আরো সাহস পাবেন ও পরবর্তীতে আবারো পশ্চিমা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের উৎসাহ পাবে রাশিয়া। এ তিনজনই সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য।
তবে ক্ষমতাধর এই দুই দেশের পারস্পরিক সহায়তার বিষয়ে দেনা-পাওনার হিসাবটা কী হবে সে বিষয়ে মুখ খোলেনি হোয়াইট হাউস।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়ায় দুই দেশে এক সাথে কিভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টিও ট্রাম্পের আলোচনা তালিকায় রয়েছে। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প) কিভাবে রাশিয়াকে জড়াতে পারেন আমি সেটা দেখার অপেক্ষায়।