নিউজ ডেস্ক:ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাকিব সাদ সাইফুল ইসলাম কর গুনে ঘুষ আদায় করছেন। এ নিয়ে মাঠে নেমেছেন জেলার মিল মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতি কেজিতে সদর উপজেলায় ৫০ পয়সা, আর অন্য ৫ উপজেলায় ৬০ পয়সা করে ঘুষ নির্ধারণ করে তা জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে সরকারি গুদামে কোনো মিল মালিক চাল বিক্রি করতে পারছেন না। চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় এ টাকা না দিলে বরাদ্দপত্র মিলছে না। এভাবে মিল মালিকদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মিল মালিকেরা অভিযোগ করেছেন, কেজিপ্রতি হিসাব কষে টাকা নেওয়ায় এবার তাঁদের চাল বিক্রি করতে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হচ্ছে। কোনো কোনো মিলারকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকাও দিতে হচ্ছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় এ বছর ১৫ হাজার ৯ শ ২৭ মেট্রিক টন চাল ক্রয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে জেলার ৪৩০ জন মিল মালিককে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫ শ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বাকি ৫ উপজেলায় ৭ হাজার ৪ শ ২৭ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে। এতে মিলারদের হিসাব অনুযায়ী সদর উপজেলায় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা হিসাবে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর অন্য ৫ উপজেলায় কেজিপ্রতি ৬০ পয়সা হিসাবে ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ গোটা জেলা থেকে আদায় হবে ৮৭ লাখ ৬ হাজার ২ শ টাকা। মোটা অঙ্কের এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর।
জেলার শৈলকুপা উপজেলার দেশ আটোর মালিক টিপু সুলতান জানান, তিনি ৬৫০ মেট্রিক টন চাল বিক্রির বরাদ্দ পেয়েছেন। এ বরাদ্দপত্র পেতে তাঁকে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। চুক্তির সময় এ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। টাকা না দিলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিশ^াস রাইচ মিল ও আলতাফ রাইচ মিলের মালিক আলতাফ হোসেন জানান, তিনি ২ মিল থেকে ৩ মেট্রিক টন চাল বিক্রির বরাদ্দ পেয়েছেন। এ বরাদ্দপত্র নিতে তাঁকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। জোহান ট্রেডার্সের মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, শুধু চাল বিক্রিতে নয়, এবার মিলারদের লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত পয়সা দিতে হচ্ছে। প্রতিটি লাইসেন্সে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে ৫ শতাধিক মিল মালিকের নিকট থেকে আরও কয়েক লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ছোট ছোট অনেক মিল মালিক রয়েছেন, তাঁদের এ টাকা দিতে কষ্ট হয়। তারপরও মিল চালু রাখতে এ বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
জেলার তেঁতুলতলা বাজারের ভাই-ভাই রাইচ মিলের মালিক সমশের আলী জানান, তাঁর নিকট থেকেও লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। তিনি এ টাকা না দিতে চাইলে লাইসেন্স নবায়ন হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছেন তিনি। মিলাররা আজ রোববার জেলা প্রশাসকের কাছে ঘুষ আদায়ের কথা লিখিতভাবে জানাবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাকিব সাদ সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁর দপ্তর থেকে কেজিপ্রতি এ টাকা নেওয়ার অভিযোগ মোটেও ঠিক নয়। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা প্রচার করছেন। তবে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়, এখানে ব্যাংকের কিছু খরচ আছে। খরচের অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে তিনি দাবি করেন।