ঝিনাইদহের সাবেক চাকরিচ্যুত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ৮টি। এসপি আলতাফের সঙ্গে আসামি হয়েছেন পুলিশের আর ৪৩ সদস্য। এরমধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, অফিসার ইনচার্জ (ওসি), এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ও ডিবি পুলিশের ওয়াচার। এজাহারে এক ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোর স্বজনরা বাদী হয়ে ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতে এসব হত্যা মামলা করেন। তবে এখনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এসব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হননি বলে জানা গেছে। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি এসব হত্যা মামলায় ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার ১৫৯ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম হত্যা ও বিএনপি নেতাদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৮০৭ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় ঝিনাইদহের সাবেক পাঁচ সংসদ সদস্য রয়েছেন। জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় সরকার বিরোধী আন্দোলন দমাতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একাট্টা হয়ে ক্র্যাকডাউন শুরু করে। বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, এমন সব নেতা-কর্মীকে টার্গেট করে হত্যার উৎসবে মেতে ওঠে। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪০ জনকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরমধ্যে ৩০ জনকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে অনেক সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি দলের সদস্যও ছিল। ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবাজার মার্কেট কমিটির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের শিকার হন।
ঘটনার দিন র্যাব পরিচয় দিয়ে রফিকুলকে শৈলকুপা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের ভাইরার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়িয়া মনোহরপুর খালপাড়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত’র পরিবার এখনো কোনো মামলা করেনি। তবে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হত্যার ঘটনায় ৮টি হত্যা ও ৩টি ভাঙচুরের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৭ আগস্ট জামায়াত কর্মী আব্দুস সালাম হত্যা মামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ ৭০ জন, ২৯ আগস্ট যুবদল নেতা মিরাজুল ও শিবির নেতা ইবনুল পারভেজ হত্যা মামলায় ১১ পুলিশসহ ২৮ জন, ১ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ইদ্রিস আলী পান্না হত্যা মামলায় ৬ পুলিশসহ ২৯ জন আসামি, ১১ সেপ্টেম্বর শিবির নেতা সাইফুল ইসলাম মামুন হত্যা মামলায় ৯ পুলিশসহ ১৪ জন, ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা এনামুল হত্যা মামলায় ৫ পুলিশসহ ১৯ জন, ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ও ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম আজাদ হত্যা মামলায় হত্যা মামলায় ৩ পুলিশসহ ১৯ জন, ১৮ সেপ্টেম্বর শিবির নেতা আবুজার গিফারী ও শামিম হত্যা মামলায় ৮ পুলিশসহ ২৩ জন, ১৯ আগস্ট বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় ৪৬৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, ২৫ আগস্ট ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় ২৩৮ জন ও বিএনপি নেতা আক্তারের দোকান ভাঙচুর মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে জেলার আইন কর্মকর্তা (পিপি) অ্যাড. ইসমাইল হোসেন জানান, এসব হত্যাকান্ডের বিষয়ে ঘটনার পরপরই সে সময় অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। এখন নতুন করে এসব মামলার তদন্তে যদি পুলিশ কর্মকর্তারা দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তারা আইনের আওতায় আসতে পারেন।