স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ২শত কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চলছে তাদেও মর্মান্তিক মানবেতর জীবন ! বেশ কয়েক দিন আগে একটি অচেনা নম্বর থেকে কল এলো। মোবাইল কল রিসিপ করার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে একটি অচেনা কণ্ঠে কান্নার সুরে বলল, আমি ঝিনাইদহের এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে চাকুরী করি। প্রায় ৬ মাস যাবত বেতন পাই না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সন্তানদের পড়ানো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঘরে খাবার নেই, কোন দোকানদার এখন আর বাকি দেয় না। প্রায় ১২/১৪ বছর আছি কোম্পানির নিকট ১৪ মাসের বেতন পাব। ৫০০ টাকার জন্য ঠ্যাঙ ভেঙ্গে দাঁড়ায়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারপরেও পাওয়া যায় না। এই নিয়ে বেশী কথা বললে কোন টাকা না দিয়ে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়। কি করব এখন অন্য কোথায় যাওয়ার জাগা নেই। আমার কথা যদি আপনি গোপন না রাখেন তাহলে জানতে পারলে ঘাড় ধরে বের করে দেবে। এখন যাব কোথায়? বউ বাচ্ছা কি খাবে ? তখন আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ সময় সে আরো জানায় যে, তাদের বেতন দেওয়া হয় হাতে হাতে। বেতনের খাতায় কোন স্বাক্ষর করা হয় না। নেই কোন ব্যংক হিসাব। ইচ্ছা করলেই প্রমান করতে পারবে না যে, সে কত টাকা অফিস থেকে নিয়েছে। কত টাকা অফিসের কাছে পাওনা আছে ? ঘটনা জানার পর গত শনিবার আমরা কয়েক জন দুপুর ১২ টার দিকে গেলাম এফএনএফ ঔষুধ কোম্পানিতে। প্রবেশ পথে পরিচয় দেওয়ার পর প্রবেশ বাধা পেলাম। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ঝিনাইদহের এফ এন এফ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির প্রায় ২ শত কর্মচারী ও কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানদের পড়ালেখা। কেউ কেউ চাকুরী ছুটির পরে অন্য কাজ করে কোন রকম জীবনযাপন করছে। জানা গেছে, কোম্পানীটি ২০০০ সালে ঝিনাইদহের নগরবাতান এলাকায় প্রথম তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিকে তারা গবাদি পশুর ঔষুধ উৎপাদন করলেও বর্তমানে তারা মানুষের ঔষুধ উৎপাদন শুরু করে। কোম্পানীকে করতে তারা বর্তমানে কোম্পানিটি ৬০টির অধিক প্রডাক্ট উৎপাদন করছে। নতুন এ প্রজেক্ট চালুর কথা বলে মালিক পক্ষ কর্মচারীদের বেতন দীর্ঘ ৬ মাস থেকে শুরু করে অনেকের ১৪ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া রেখেছে। যে সকল দোকানে তারা বাকিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতো তারা আর তাদেরকে মালামাল দিতে চাইনা। প্রতিনিয়ত তারা পাওনাদারদের কাছে লাঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানে চাকরীতে কোন নিয়োগপত্র বা যোগদান পত্র দেওয়া হয় না। চাকরীর কোন নিশ্চয়তা না থাকায় তারা নিরবে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। বেতন ভাতা লেনদেনে কোন স্বাক্ষর বা রেভিনিউ ষ্ট্যাম ব্যবহারও করা হয় না। মাস শেষে সুপারভাইজারের কাছে নগদ অর্থ দিয়ে দেয়। সুপারভাইজার কর্মচারীদের মধ্যে বন্টন করে দেয়। আর্থিক লেনদেনের কোন প্রমানাদি কোন কর্মচারীকে দেখানো হয়না। কয়েকজন শ্রমিকেরও লক্ষাধিক টাকা বকেয়া রয়েছে। একই কারনে এর পূর্বে একবার শ্রমিক অসস্তোষের ঘটনাও ঘটেছিলো তখন মালিকপক্ষ কিছু বকেয়া বেতন পরিশোধ করে। তখন শ্রমিকরা মালিক পক্ষের আশ^াসে আন্দোলন সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিলো। তরিকুল নামের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে সে জানায়, কিছুই বলতে পারবো না শুধু বলল যে, এম ডি স্যার দেশের বাহিরে আসলে সকলের বেতন দিয়ে দেবে। তাছাড়া মাঝে মাঝে তো একটি পরিবারের মাঝেও সমস্যা হয়। আমারা হিউম্যান প্রডাকশনে যাওয়ার পর আমাদের একটু সাময়িক সমস্যা হয়েছে। সে আরো জানায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হলে দুই দিন পরে আসবেন। কারখানার পাশের একটি চায়ের দোকানদার জানায়, ঔষুধ কোম্পানির কর্মচারীদের বেতন দেয় না। ওদের কোন মাল বাকি দিলে তা আর পাওয়া যায় না। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, রোজার মাসে ও ইদুল ফিতর তাদের পরিবার গুলি খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে দিয়ে ঈদ কাটিয়েছে। তবে বেতনের টাকা না দিলেও বোনাসের টাকা দিয়েছে। এ ভাবেই চলছে ঝিনাইদহ এফ এন এফ ফার্মাসিউটিক্যালস কর্মচারীদের ৬ মাস থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া, মানবেতর জীবন যাপন করছে ২০০টি পরিবার। এ ব্যাপারে আসহায় শ্রমিকরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।