নিউজ ডেস্ক:
বিশ্ববাজারে অশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৫০ ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খেলেও বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম এখনো কমেনি। আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা আজও কার্যকর হয়নি। ফলে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে তার কোন প্রভাব পড়েনি।
সূত্র জানায়, গত বছররের পুরোটা সময় এবং চলতি বছরের বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তেল নিয়ে গবেষণা করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি বছর জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৫৫ ডলারের ওপরে যাবে না। এই পূর্বাভাস সত্ত্বেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমানো হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের চেয়ে বাংলাদেশে অনেক বেশি দামে ক্রেতাদের তেল কিনতে হচ্ছে। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাতে কর্ণপাত করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে- বিভিন্ন ধরণের জ্বালানি তেলের দাম ৫ থেকে ৮ ভাগ কমানোর সুযোগ রয়েছে। এই পরিমান দাম কমালেও তেল বিপণনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে। এরপরও কমানো হচ্ছে না তেলের দাম। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে মতভেদ।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চার ধরণের তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেন। লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ৮ ভাগ এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম ৫ ভাগ কমানোর কথা বলা হয়। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম কমানোর কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কারণ, বিগত দিনে এই তেলের দাম লিটার প্রতি ৩০ ভাগ হ্রাস করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি লিটার অকটেন বিদ্যমান ৮৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৪ দশমিক ৫৫ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকা থেকে ৮১ দশমিক ৭০ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৬০ টাকার করার কথা সুপারিশ করা হয়। তবে বিমানের জন্য জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের মূল্য কমানোর কোনো প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো বিদ্যমান দামে বিক্রি হবে। এখন এই দুটি জ্বালানি লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে জেট ফুয়েল ৬৩ টাকা এবং ফার্নেস ওয়েল ৪২ টাকা করে।
চার ধরণের তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করা হলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এগুলো বিক্রি করে লাভ করবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব অনুযায়ী তেলের দাম কমানো হলেও বিপিসি লিটার প্রতি অকটেনে মুনাফা করবে ৬ টাকা ৯ পয়সা, কেরোসিনে ১০ টাকা ৫৬ পয়সা, ডিজেলে ৩ টাকা ২২ পয়সা এবং পেট্রোলে মুনাফা হবে ৫ টাকা ৮ পয়সা। আর বছরে এই চার পণ্য বিক্রিতে বিপিসি’র মুনাফা দাঁড়াবে মোট এক হাজার ৮৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, গত বছরের এপ্রিল মাসে জ্বালানি তেলের দাম একদফা কমানো হয়েছিল। তখন লিটার প্রতি অকটেন ৯৯ টাকা থেকে ৮৯ টাকা, কেরোসিন ৬৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, ডিজেল ৬৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা এবং পেট্রোল ৯৬ টাকা থেকে ৮৬ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
ফার্নেস অয়েলের দাম না কমানোর পেছনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে-ইতিপূর্বে ফার্নেস অয়েলের দাম লিটার প্রতি ৩০ ভাগ কমানো হয়েছে। ফলে এর দাম লিটার প্রতি ৬০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৪২ টাকা। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপানকারীরা লাভ করছে। এবং জনগণও এর সুফল ভোগ করছে। তবে দাম কমানোর পরও বিপিসি এই পণ্যটি বিক্রি করে লিটার প্রতি মুনাফা করছে ২ টাকা ৪৬ পয়সা। যেহেতু আগে ফার্নেস অয়েলের মূল্য ৩০ ভাগ কমানো হয়েছে তাই এ পর্যায়ে এটির দাম আরও কমানো যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মতামত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তবে তেলের দাম কমানোর সুপারিশ আমলে নিচ্ছে না জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে, বিপিসি এর আগে তেল বিক্রি করে লোকসান গুণেছে। এখন বেশ কয়েক বছর ধরে তারা লাভে রয়েছে। তাই এই মুনাফা কমানো উচিত হবে না।