একে তো (বয়সে) ছোট, তার ওপর এত তাড়াতাড়ি চলে গেল। আগে তো আমার চলে যাওয়ার কথা ছিল। ’
গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের মারা যাওয়া নিয়ে কথাগুলো বলেছেন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ।
১৯৮৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সেই ইতিহাস গড়েন নিয়াজ মোর্শেদ। ১৫ বছর পর ২০০২ সালে পরবর্তী গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানকে পায় বাংলাদেশ। সেই জিয়া আজ খেলতে খেলতেই ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নিয়াজ।
দাবা ফেডারেশনে চলমান জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম রাউন্ডে আজ এনামুল হক রাজীবের বিপক্ষে খেলছিলেন জিয়া। খেলার এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে দ্রুত ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়া হলেও মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
জিয়ার আগেই খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় ভেন্যু ছেড়ে চলে যান নিয়াজ। পথে মৃত্যুর খবর শুনতে পেয়ে চমকে ওঠেন তিনি। তাই তো হাসপাতালে এসে একদমই ভেঙে পড়েন এই দাবাড়ু।
জিয়াউর রহমানের মারা যাওয়া নিয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের মতো ব্যথিত গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হক রাজীব।
তিনি বলেন, খেলার সময় জিয়াকে দেখে কোনোভাবেই অসুস্থ মনে হয়নি। এমনকি জিয়া নিজেও কিছু বলেননি। একপর্যায়ে ড্র অফার দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন দেননি, সেই প্রশ্নই এখন পোড়াচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, ‘একবারও মনে হয়নি সে (জিয়া) অসুস্থ। একবারের জন্যেও সে কিছুই বলেনি। আমি ভেবেছিলাম ড্র অফার দেব। যেহেতু আমি কালো ঘুটি নিয়ে খেলেছি। তারই একমাত্র সম্ভাবনা ছিল চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইট দেওয়ার। কিন্তু আমি দেইনি। হয়তো ড্র অফার দেওয়া উচিত ছিল। যদি সে ড্র নিত, তাহলে হয়তো এমন কিছু হতো না। যদি সামান্যতম বুঝতাম তাহলে সেরকম চেষ্টা করতাম। ’
‘সে কেবল টেবিলের পাশে কাত হয়ে ছিল। ভাবলাম পানির বোতল (খুঁজছে) বা এরকম কিছু একটা করছে আরকি। তখন আমার চাল ছিল। তারপর আমি তার দিকে তাকালাম। তখনই সে পড়ে গেল। আমি তখন লাফ দিয়ে গিয়ে ধরলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ’
দাবাই ছিল জিয়ার ধ্যানজ্ঞান। এর বাইরে অন্য কোনো পেশায় নিজেকে নিযুক্ত রাখেননি। তার ছেলে তাহসীন তাজওয়ার জিয়াও বর্তমানে খেলছেন ফিদেমাস্টার খেতাব নিয়ে। জিয়ার চলে যাওয়াকে তাই বিশাল ক্ষতি হিসেবে দেখছেন রাজীব, ‘দাবাই তার প্যাশন ছিল। মানুষ তো প্যাশনের কারণেই সবকিছু করে। সবসময়ই সে দাবা নিয়ে থাকতে পছন্দ করত। তার চলে যাওয়া অবশ্যই বিশাল ক্ষতি। ’