নিউজ ডেস্ক:
আপন। মায়ের একমাত্র ছেলে। প্রাণবন্ত ও খুবই লাজুক স্বভাবের। আবার পড়াশুনায়ও বেশ ভালো। শহরের নামকরা স্কুলে পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাতেও কিন্তু কম যান না আপন। বন্ধুদের বাসায় নিয়ে আসা। মাকে সঙ্গী করে সবার সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলা কোনটায় বাদ দেয় না। কিন্তু সময়ে কেমন যেন পাল্টে যায় আপন। ধীরে ধীরে বন্ধুদের সঙ্গে সংখ্যা কমিয়ে একজনের সঙ্গে মিশতে শুরু করে। পরে একসময় অন্ধকার জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। মা কিছুই জানতে পারে না। একদিন হঠাৎ টেলিভিশনের পর্দায় আপনকে জঙ্গি হিসেবে আবিষ্কার করে মা। তখন মায়ের দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে।
আপনের মতো আমাদের দেশে আরও অনেকে আছেন যারা বন্ধুদের পাল্লায় পরে পরবর্তীতে জঙ্গি হয়ে উঠেন। সম্প্রতি গুলশান হামলা ও শোলাকিয়ায় হামলা থেকে দেখা গেছে, উচ্চ শিক্ষিত ধনী পরিবারের সন্তানরা সাধারণত এই জঙ্গি কাজকর্মে অংশ নিচ্ছে। তাই সন্তানদের নিয়ে এখন বাবা মায়েদের চিন্তার অন্ত নেই। পাশাপাশি সরকারও এ ব্যাপারে পিতামাতাকে আরও বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
সাধারণত টিনএজার তথা বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানরা বেশি ভুল করে থাকে। কেননা এ সময় তারা নানা বন্ধুদের সংস্পর্শে আসে। কাজেই জঙ্গি সচেতনায় এ সময় সন্তানদের পাশে থাকুন। তাদের চোখে চোখে রাখুন। সন্তানরা কখন, কোথায়, কার সঙ্গে মিশে সবসময় তার খবরাখবর রাখুন। আপনার সন্তানের বন্ধুটি ভাল না খারাপ তা আগে যাচাই করুন। তাহলে জঙ্গি হওয়া থেকে আপনার সন্তান অবশ্যই বাঁচবে।
কীভাবে জানবেনে আপনার সন্তানের বন্ধুটি ভালো না খারাপ-
ছোটদের ভালোবাসতে শেখায়
আপনার সন্তান তার ছোট ভাইবোনের সঙ্গে খেলা করছে কিনা কিংবা তাদের সঙ্গে প্রিয় কোন জিনিস শেয়ার করছে কিনা তা আগে জেনে নিন। যদি দেখেন এমনটি করছে তাহলে বুঝবেন আপনার সন্তান ভাল বন্ধুদের সংস্পর্শেই আছে। ভালো বন্ধুরা আপনার সন্তানকে পরিবারের সঙ্গে বিশেষত ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে সময় কাটানো শেখায়। ছোট ভাইবোনকে ভালবাসতে শেখায়। এর ব্যতিক্রম হলেই সচেতন হোন।
পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেনা
আপনার পরিবারের সংস্কৃতি কিংবা অন্য কিছু যা আপনার পরিবারের ঐতিহ্য বহন করে তা নিয়ে একজন ভাল বন্ধু কখনই কোন নেতিবাচক কথা বলবে না। আবার পরিবারের বিপদ আপদে যে কোন সম্যসায় বন্ধুটিকে যদি আপনার সন্তানের পাশে পান, তবে বুঝে নেবেন আপনার সন্তান একজন ভাল বন্ধুর সঙ্গেই আছে।
হিংসা করে না
একজন ভাল বন্ধু কখনই আপনার সন্তানের সাফল্যে হিংসা করবে না। বরং তার সাফল্যে আপনারই মতো সেও খুশি হবে।
খুব বেশি মিথ্যা বলে
ছেলেমেয়েরা দিনের বেশিরভাগ সময় তার বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে কাটায়। কাজেই তারা বন্ধুদের ভাল খারাপ সবকিছু অনুসরণ করতেই পারে। মিথ্যা বলার অভ্যাসটাও সে পেয়ে থাকে তার বন্ধুদের কাছ থেকেই। হঠাৎ করে যদি আপনার সন্তান খুব বেশি মিথ্যা বলা শুরু করে তবে বুঝে নিন আপনার সন্তানের বন্ধুটি ভাল নয়। এসব বন্ধুদের পাল্লায় পরে পরবর্তীতে আপনার সন্তান অন্ধকারে পা বাড়াতে পারে। কাজেই তাদের কাছ থেকে সন্তানদের দূরে রাখুন।
প্রতিশোধ পরায়ন
আপনার সন্তান হঠাৎ করে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠলে সতর্ক থাকুন। যদি দেখেন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ না করলে জেদ করছে, আপনি না বলার পরও একই কাজ বার বার করছে, তবে বুঝে নিন সে এই কাজগুলো অন্য কারো কাছ থেকে শুনে বা দেখে করছে। অন্যকে দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে আপনার সন্তান। এমনটি হলে সাবধান হোন।
সন্তানদেরকে বন্ধু পছন্দ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিন। কিন্তু বন্ধুটি যদি খারাপ হয় তবে তাকে তা বুঝিয়ে বলুন। কখনোই তাকে কোন কিছুতে বাধ্য করবেন না। এতে ভাল হওয়ার চেয়ে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। সন্তানদের আগে থেকেই সব বিষয়ে সতর্ক করুন। তাদের বিপদের হাত থেকে বাঁচান।