গুজব, আলমডাঙ্গায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে বিপত্তি
নিউজ ডেস্ক:ছেলেধরা গুজব এখন আলমডাঙ্গায়। ছেলেধরা সন্দেহে আলমডাঙ্গায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের শিশু সন্তানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় লোকজন। ইতিপূর্বে গত শুক্রবার প্রতিপক্ষকে তুলে নিয়ে গিয়ে ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় শহরে ফেলে রাখা ও বক্সীপুর গ্রাম থেকে অজ্ঞাত বোরকাধারীর নিকট থেকে অজ্ঞান অবস্থায় শিশু উদ্ধারের খবর শোনা যায়।
জানা গেছে, সারা দেশে ছেলেধরা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ‘পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে’ ফেসবুকে এমন স্ট্যাস্টাস দিয়ে গুজব রটানোর পর সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত ১২ দিনে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ছেলেধরা সন্দেহে ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ গুজব এখন আলমডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে। কয়েক দিন পূর্বে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে পান্না হোসেন তাঁর স্ত্রী কবিরণ নেছা (৩১) ও একমাত্র শিশু সন্তান কাউসারকে নিয়ে আলমডাঙ্গা স্টেশনের নিকট বসবাসকারী স্বপন ব্যাধের বাড়ি বেড়াতে আসেন। স্বপন ব্যাধ কবিরণ নেছার ভাই। ১০ বছর আগে স্বপন আলমডাঙ্গায় এসে ব্যাধ সম্প্রদায়ের মেয়ে রিনা রাণীকে বিয়ে করে তাঁদের সম্প্রদায়ের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন।
গতকাল রোববার দুপুরের দিকে বাবা-মায়ের সঙ্গে মামা বাড়ি বেড়াতে আসা শিশু কাউসারকে স্থানীয় কয়েকজন তাঁদের বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে শিশুটি জানায়, ঢাকা কমলাপুর। পরে তার মাকে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, লালমনিরহাট। মা-ছেলের কথায় মিল না পেয়ে এলাকার অনেকে ওই দম্পতিকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করেন। এমন সন্দেহে এলাকাবাসী তাঁদেরকে একটি ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা করেন। এ সময় জীবন বাঁচাতে আতঙ্কিত হয়ে পান্না হোসেন পালিয়ে যান। পুলিশ সংবাদ পেয়ে কবিরণ নেছা ও তাঁর সন্তান কাউসারকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে শ্রীরামপুর গ্রামবাসীর সহযোগিতায় পান্না হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়, শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসে। পরে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়।জানা যায়, পান্না হোসেনের প্রথম স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন শিশুপুত্র কাউসারকে রেখে অন্যত্র চলে গেলে পান্না হোসেন কবিরণ নেছাকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁরা বসবাস করতেন ঢাকার কমলাপুর বস্তিতে। দ্বিতীয় বিয়ের পরে তাঁরা ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে বসবাস শুরু করেন। আর কবিরণ নেছার বাবার বাড়ি লালমনিরহাট। এ কারণে তাঁদের একেকজন একেক রকম ঠিকানা খুব স্বাভাবিকভাবেই বলেছেন। এ বিভ্রাটই তাঁদের জন্য বিপদ ডেকে এনেছিল। পান্না হোসেন জানান, আগে জানলে তাঁরা কখনো আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসতেন না।এ দিকে ছেলেধরা আতঙ্ক এখন আলমডাঙ্গার সর্বত্র ছড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকেরা। আবার স্কুলে পাঠালেও তাঁদের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছেন অনেক অভিভাবক।আলমডাঙ্গা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মাসেতুতে মাথা লাগার বিষয়টি গুজব। এমন সন্দেহে ছেলেধরা বলে গণপিটুনিতে হত্যা করা ফৌজদারি অপরাধ। আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।