বাড়তি রোগীর চাপে হিমশিম চিকিৎসক-নার্সরা
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি রাহুল রাজ:থেমে থেমে বৃষ্টি ও প্রচ- তাপদাহে চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত তিন দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১১৭ জন রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্ক নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও রয়েছে। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ডেঙ্গুর প্রকোপ শেষ হতে না হতেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় রোগী ও চুয়াডাঙ্গাবাসীর মধ্যে বাড়তি আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ মেঝে, বারান্দা, চলাচলের পথ, এমনকি ট্রলি ওঠানোর সিঁড়িও ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাসহ চার উপজেলা থেকেই রোগী আসছে হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার একটি ছাত্রাবাসের কয়েকজন ছাত্রকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সালমা খাতুন নামের এক মা তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাচ্চার হঠাৎ করেই জ্বর, কিছুক্ষণ পরপরই পায়খানা হচ্ছে। তাই শনিবার রাতে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’ হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন শাহিন নামের এক রোগী বলেন, ‘শনিবার সকালে মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম। এরপর থেকেই পেটের যন্ত্রণায় ভুগছি। ঘন ঘন পায়খানা হচ্ছে। উপায় না পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে ২৩ জন শিশু, ৪৫ জন পুরুষ ও ৪৯ জন নারী মোট ১১৭ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ৩৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। ওই ওয়ার্ডে ১০ জন রোগীর ধারণক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে ৭৯ জন রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে। ওয়ার্ডে জায়গা দিতে না পেরে ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের সামনে, বারান্দায়, হাসপাতলের করিডরেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আক্রান্ত রোগীদের।
এদিকে, হঠাৎ করেই মাত্রাতিরিক্ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে খাবার স্যালাইন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও সংকট দেখা দিয়েছে কলেরা স্যালাইনের। হাসপাতালের এ সংকট মোকাবিলায় গত শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার পৌর মেয়র ৭৫ প্যাকেট কলেরা স্যালাইন প্রদান করেন। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা জামান গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টির (এসডিএফ) পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট ১০০ প্যাকেট কলেরা স্যালাইন প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ডায়রিয়ার প্রকোপ মোকাবিলার জন্য রোগী কল্যাণ সমবায় সমিতি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনকে নগদ এক লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশু-বয়স্কদের ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া শিশু, অভিভাবকদের অপরিচ্ছন্নতা থাকা ও দূষিত পানি পান করার কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। শিশুদের ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই মায়েদের সচেতন হতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান জানান, হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ড ছাড়িয়ে হাসপাতালের বারান্দা ও মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী ভরপুর। এমনকি হাসপাতালের ভেতর চলাচলের সব জায়গাতেও ডায়রিয়া রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ভর্তি হয়েছে। কোনো এক এলাকার একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত না হওয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অস্বাস্থ্যকর খাবার, পানি শূন্যতা, বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরমের কারণে এ সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরও জানান, কলেরা স্যালাইন ফুরিয়ে গেলেও হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও খাবার স্যালাইন মজুদ আছে। কলেরার স্যালাইন আগামীকাল সোমবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আসবে। তবে বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা আশঙ্কামুক্ত। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি।