নিউজ ডেস্ক:দামুড়হুদায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকারের (৩২) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের নিকট এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিল্টন সরকার ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার রানপাশা গ্রামের ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সুভাষ চন্দ্র সরকারের ছেলে। তিনি দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু ও দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক। এ সময় এমপি হাজি আলী আজগার টগর এক লাখ টাকা ও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম পঞ্চাশ হাজার টাকা মিল্টনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। মিল্টন সরকারের মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ তাঁর পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে। একমাত্র ছেলে মিল্টনের মৃত্যু সংবাদ শুনে পিতা ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সুভাষ চন্দ্র সরকার রাতেই চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে দামুড়হুদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর কবির জানান। এদিকে, মিল্টন সরকারের মর্মান্তিক মৃত্যুতে জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে বয়ছে শোকের মাতম।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার রাতে নিয়মিত টহলের জন্য দামুড়হুদা থানা থেকে মোটরসাইকেলযোগে লোকনাথপুরের দিকে যাচ্ছিলেন এসআই মিল্টন সরকার ও কনস্টেবল দীপক। দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের নিকট পৌঁছালে একটি ভ্যানের সঙ্গে এসআই মিল্টনের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে তিনি সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক তাঁর মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। এ সময় মিল্টন ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হলে বিকট শব্দ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তবে ঘাতক ট্রাকটি তাৎক্ষণিক পালিয়ে যায়। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। থানা চত্বরে লাশ নিয়ে আনা হলে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ক্ষতবিক্ষত মিল্টনের মরদেহ জড়িয়ে ধরে তাঁর অনেক সহকর্মী কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর খবর পেয়ে মিল্টনের স্ত্রী তৃষ্ণা সরকার দেড় বছর বয়সী শিশুকন্যা সেজুতিকে নিয়ে থানা চত্বরে পৌঁছান। তিনি স্বামীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে বিলোপ করতে করতে বারবার মুর্ছা যান। মায়ের কান্না দেখে শিশুকন্যা সেজুতিকেও ছলছল চোখে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেকেই ওই সময় ঢুকরে কেঁদে ওঠেন।
মিল্টনের মোটরসাইকেলের পেছনেই আরেক মোটরসাইকেলে থাকা কনস্টেবল দীপক জানান, নিয়মিত টহলের জন্য তাঁরা থানা থেকে বের হয়ে আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের নিকট পৌঁছালে একটি ভ্যানের সঙ্গে মিল্টনের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে মিল্টন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগতির ট্রাক এসআই মিল্টনের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক জানান, ‘রাতে নিয়মিত টহল ডিউটির জন্য নিজ নিজ মোটরসাইকেলযোগে থানা থেকে বের হন মিল্টন সরকার ও কনস্টেবল দীপক। পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পুলিশ সদস্যরা। আমরা ঘাতক ট্রাকটি আটকের জন্য জোর অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’
এদিকে, এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন এসে এসআই মিল্টনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু ও দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর খালেক।
উল্লেখ্য, নিহত পুলিশের উপপরিদর্শক মিল্টন সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে মাস্টার্স পাস করার পর ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের এসআই পদে যোগদান করেন। তিনি খুলনা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ র্যাবে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৮ সালের ২১ মে দামুড়হুদা মডেল থানায় এসআই হিসেবে যোগ দেন।