হাসপাতালে ভর্তি; পুলিশ সুপারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ধর্ষক মালেক পলাতক
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গার গোপিনাথপুরে প্রথম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে (৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে। গত বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের স্কুলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবারও অভিযুক্ত মালেক ওই শিশুটিকে পুনরায় তাঁর ঘরে ডাকলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের শিকার ওই শিশুটিকে আহত অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ পুলিশের একটি টিম হাসপাতাল পরিদর্শন করে। এরপর পুলিশ সুপার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধর্ষক আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তাঁকে আটক করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান।
এ বিষয়ে শিশুটির মা জানান, গত বুধবার দুপুরে শিশুটির দাদি তাকে গোসল করানোর সময় শরীরে রক্তের দাগ দেখে ঘটনাটি জানতে চাইলে ভয় পেয়ে যায় সে। ভয়ে সারা দিন কিছু না জানালেও রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। এ অবস্থায় সে ঘুমিয়ে যায়। সারা রাত শিশুটি ঘুমের ঘোরে ব্যথায় কাতরালেও তার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, গ্যাসের ব্যথা হতে পরে হয়তো। পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ধর্ষণের শিকার ওই শিশুটি বাড়ির কয়েকজনকে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা জানায়। ওই সময় শিশুটির মা মেয়েকে কাছে ডেকে ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করলে শিশুটি ভয়ে ভয়ে জানায়, শুধু গতকালই না, গত ১০-১২ দিন আগেও আব্দুল মালেক তাকে ঘরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছেন। এ সময় মেয়ের কাছে এ ধরনের কথা শুনে মান-সম্মানের কথা ভেবে কাউকে কিছু জানায়নি শিশুটির বাবা-মা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার শিশুটিকে ভয় দেখিয়ে বাড়িতে ডেকে নির্যাতন শুরু করলে লম্পট মালেকের দুই ছেলের বোউ ঘটনাটি দেখে শিশুটির মাকে ডাক দেন। মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসে ঘটনা জানতে চাইলে শিশুটি বলে, তাকে চকলেটের প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে কয়েকবার খারাপ কাজ করা হয়েছে । এ সময় স্থানীয় মেম্বারসহ প্রতিবেশীদের কাছেও একাধিকবার মালেকের নির্যাতনের কথা বলা হয়। পরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় ব্যক্তিদের পরামর্শে গতকাল রাত আটটার পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে শিশুটির পরিবার। বিষয়টি জানতে পেরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের একটি টিম হাসপাতালসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গোপিনাথপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালকের ওই শিশু কন্যা বুধবার দুুপুরে বাড়ির পাশে খেলা করছিল। এ সময় বাড়ির পাশের আব্দুল মালেক ওই শিশুকে চকলেট খেতে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রতিবেশী আব্দুর রহমান জানান, কয়েক দিন ধরে আব্দুল মালেকের স্ত্রী বাড়িতে নেই। মেয়ের চিকিৎসার জন্য মা-মেয়ে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এ সুযোগে মালেক চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ওই শিশুকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর তাকে একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। গাইনি কনসালটেন্ট ডা. আকলিমা খাতুন জানান, ধর্ষণের ঘটনায় একটি শিশু সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছে।
পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত মাহাতাব আলির ঘরজামাই আব্দুল মালেক (৫৫) বুধবার দুপুরে তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শিশুটিকে খাবারের লোভ দেখিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলে রক্তাক্ত জখম হয় শিশুটি। আব্দুল মালেক ধর্ষণের ঘটনাটি পরিবারের কাউকে না জানানোর জন্য নিষেধ করে শিশুটিকে। তবে পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। আমরা প্রাথমিকভাবে নির্যাতিত ওই শিশুটির চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। একই সঙ্গে ধর্ষক আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। খুব শিগগিরই আমরা ধর্ষক মালেককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’