কেরুজ শিল্পকারখানা পরিদর্শনে শিল্পমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ছয় সদস্যের উচ্চপদস্থ দল
নিউজ ডেস্ক:দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোং বাংলাদেশ লিমিটেডের চিনিকল, ডিস্ট্রিলারি, জৈব সার কারখানা ও কৃষিখামার পরিদর্শন করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল, শিল্প মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির তিন সাংসদ মোট ছয় সদস্যের একটি উচ্চপদস্থ দল। তাঁরা এ অঞ্চলের একমাত্র ভারী এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটিকে আরও উন্নত করতে কথা বলেছেন আখচাষি, কর্মকর্তা, শ্রমিক, কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে। সরকারের নতুন পরিকল্পনা শিগগিরই বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চিনিশিল্পকে লাভজনক করার কথা শোনালেন তাঁরা। দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোং বাংলাদেশ লিমিটেডের চিনিকল, ডিস্ট্রিলারি, জৈব সার কারখানা ও কৃষিখামার পরিদর্শন করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল, শিল্প মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির তিন সাংসদ মোট ছয় সদস্যের একটি উচ্চপদস্থ দল। তাঁরা এ অঞ্চলের একমাত্র ভারী এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটিকে আরও উন্নত করতে কথা বলেছেন আখচাষি, কর্মকর্তা, শ্রমিক, কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে। সরকারের নতুন পরিকল্পনা শিগগিরই বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চিনিশিল্পকে লাভজনক করার কথা শোনালেন তাঁরা। গতকাল শনিবার সকালে কেরুজ চিনিকল, ডিস্ট্রিলারি, জৈব সার কারখানা ও কৃষিখামার পরিদর্শন শেষে বিকেলে কেরুজ ক্লাব মাঠে আখচাষি, কর্মকর্তা, শ্রমিক, কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শিল্পমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যরা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান অজিত কুমার পালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক এ ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির কীভাবে আরও উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয় ভেবে দেখব। সবার সঙ্গে পরিচিত হলাম, মিলটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম, বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে, শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার হাসপাতালে চিকিৎসক নেই, আপনারা চিকিৎসকের দাবি করেছেন। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলাপ করে চিকিৎসক দেওয়ার বিষয়টি দেখব। এ মিলটি বাঁচিয়ে রাখতে বেশি বেশি আখের চাষ করুন। এ শিল্প বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারের একার নয়, দায়িত্ব আপনাদেরও।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, কেরুজ শিল্প কারখানার লভ্যাংশের টাকা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যাবে না। এ প্রতিষ্ঠানের লাভের টাকায় এ প্রতিষ্ঠানেরই উন্নয়ন করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করতে হবে। এ ছাড়াও উন্নত জাতের আখ তৈরিতে গবেষণা কেন্দ্র কাজে লাগানোসহ আখ চাষিদের ঋণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মতবিনিময় সভা শুরুর পর শোকের মাসকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন কেরু অ্যান্ড কোং বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী। আখচাষিদের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন আখচাষি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আব্দুল হান্নান। বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা ও দাবি তুলে তিনি বলেন, আখের মূল্য মণপ্রতি ২০০ এবং চিনির মূল্য কেজিপ্রতি ১০০ টাকা করতে হবে। মিল চলাকালীন ১৫ দিন পরপর ১০ টাকা হারে আখের মূল্য বাড়াতে হবে। আখচাষিদের ছেলে-মেয়েদের চাকরি দিতে হবে এবং কেরুজ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। শ্রমিক ও কর্মচারীদের সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ১৯৭৩ সালে মিলটি জাতীয়করণের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৯২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করে আসছে। কেরুজ চিনিকলকে বাঁচিয়ে রাখতে পাঁচটি ইউনিট রয়েছে। সুগার, ডিস্ট্রিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিখামার ও জৈব সার কারখানা। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মিলটি আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। যদি মিলটিকে ১২ মাস চিনি উৎপাদনের উপযোগী করা হয়, তাহলে মিলটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পারে। মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, শিল্প মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক, মেহেরপুর-২ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ শাহিদুজ্জামান ও ময়মনসিংহ-১১ আসনের সাংসদ কাজিম উদ্দিন। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য দেন দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদিন খোকন, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ঝন্টু, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মর্তুজা, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জীবননগর পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু, কেরুজ শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী প্রমুখ।শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা:দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি শেষে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন অতিথিরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কেরুজ ট্রেনিং কমপ্লেক্সে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান অজিত কুমার পালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, রক্ত ঝরা শোকের মাস, এ আগস্ট মাস। এ মাসের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ মাসের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত তাঁরা থেমে নেই। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে চলেছেন তাঁরা। একটি কুচক্রী মহলের সুদীর্ঘ চক্রান্তে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আপনাদের। এ প্রতিষ্ঠান বেঁচে থাকলে আপনারা সাবলম্বী হবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ চিনিশিল্প। তাই এ শোকের মাসে আমরা শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ, জাতি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যে যেখানে কর্ম করছেন, প্রত্যেককে সততা ও নৈতিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব আবদুল হালিম, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আজগার টগর এমপি, শিল্প মন্ত্রাণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য এ কে এম ফজলুল হক এমপি, একই কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান এমপি ও কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এমপি। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ঝন্টু, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মন্জু, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু, কেরুজ শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতা, কেরুজ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আলোচনা সভা শেষে শোক দিবস উপলক্ষে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী। আজ রোববার সকাল নয়টায় কুষ্টিয়ার জগতি চিনিকলের উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করবেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ এ দল।