ঝিনাইদহ সংবাদদাতাঃ ঝিনাইদহে খাদ্য গুদাম থেকে পাচারের সময় ১০ টান উন্নতমানের চাল আটকের পর ওই দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার চাল বদল বানিজ্য ফাঁস হয়ে পড়েছে। গত দুই বছর ধরে গুদাম থেকে ভাল চাল বের করে দিয়ে সেই লটে পচা, মোটা ও নি¤œমান চাল রাখা হচ্ছে। এতে উপকারভোগী বিশেষ করে আনসার ও পুলিশ সদস্যরা রেশনের চাল খেতে না পেরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমান ঝিনাইদহ খাদ্যগুদামে চালের মজুদ খাতা কলমের সাথে মিল নেই এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। চাল বদল করতে গিয়ে ৬০ থেকে ৭০ মেট্রিক টন চাল রিপ্লেসমেন্ট করতে না পারায় গুদামে ঘপলার আশংকা দেখা দিয়েছে। তিন উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঝিনাইদহ সদর গুদামের চাল ও গমের মজুদ পরিমাপ করা হচ্ছে। শনিবার দিনব্যাপী এই ওজনের কাজ করা হয়। তাদের ১৮ সেপ্টম্বরের আগেই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্মকর্তাদের মতে ঝিনাইদহ সদর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন এই চাল বদল বানিজ্যের সাথে জড়িত। তার সাথে ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর ও কালীগঞ্জের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সন্ধান মিলেছে। ওই সিন্ডিকেটে হাটগোপালপুরের চাল ব্যবসায়ী মেসার্স সালাম রাইচ মিলের মালিক ইমাদুল ও তার ভাই রাজু, দেশ অটোর মালিক টিপু সুলতান, ওলিয়ার রহমান এবং কালীগঞ্জের পাটোয়ারী রাইচ মিলের মালিক ওবাইদুর রহমান পাটোয়ারী জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা বিভাগ।
গত বৃহস্পতিবার ১০ টন সরকারী চাল জব্দ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রেকর্ড হওয়ার পর সিন্ডিকেট ওই সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন ঈদুল আজহার একদিন আগে চাল ব্যবসায়ী রাজু ও ওবাইদুর রহমান পাটোয়ারী সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সহায়তায় এক’শ টান নি¤œমানের চাল ঢুকিয়ে গুদাম থেকে সমপরিমাণ ভাল চাল বের করে নিয়ে যান। গত দুই বছর ধরে ঝিনাইদহ খাদ্য গুদামে এই চাল বদল বানিজ্য চলে আসছে। টিআর জিআর, ধান ও গম কেনা বেচার সাথেও এই চক্র জড়িত। চিকন ধান কেরার অজুহাতে গত মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে কোন ধান কেনা হয়নি। সব ধান সরবরাহ করেছে সিন্ডিকেড সদস্য রাজু ও ইমাদুল। এদিকে মাগুরায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে জসিম উদ্দীন স্থানীয় এক মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ঝিনাইদহ সদর খাদ্যগুদামে হেন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করছেন না। গুদামের ভিতরে রাস্তা তৈরীতে পুকুর চুরি করা হয়েছে। পুরানো ইট দিয়েই রাস্তা মেরমত করে নতুন ইট বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। জুট মিল থেকে চটের বাস্তা কেনায় চরম দুর্নীতি এবং অনিয়ম করা হচ্ছে। ৩০ কেজির চটের বস্তা ৩৬০ গ্রাম ও ৫০ কেজির বস্তা আট’শ গ্রাম ওজন থাকার কথা। কিন্তু বস্তাগুলো ওজনে কম বা বেশি নেওয়া হয়। আর ওজনের কম-বেশি হলে সরবরাহকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেন খাদ্য কর্মকর্তা জসিম। টাকা না দিলে বাস্তা বাতিলের হুমকী দেওয়া হয়।
তার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাকে দিয়ে গুদাম থেকে খাদ্য সহকারী পরিদর্শক ফরহাদ ও দারোয়ান আবুজারকে অন্যত্র বদলি করে দিয়েছেন। বর্তমানে গুদামের সাইলো অপারেটিভ মীর মোকাদ্দেস হোসেন ও দারোয়ান পুর্ন কুমার নাথের দিয়ে অপকর্ম চলিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ঝিনাইদহ র্যাবের দায়েরকৃত মামলায় এই সিন্ডিকেটর দুই সহযোগী রাকিব ও কিবরিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামী ঝিনাইদহ সদর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন, চাল ব্যবসায়ী ওলিয়ার রহমান ও টিপু সুলতান পলাতক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এর অধিনায়ক মেজর মনির আহম্মেদ জানান, আমরা অধিকতর তদন্ত করে দোষিদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা করছি। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি ইমদাদুল হক শেখ জানান, বিষয়টি নিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। আমরা চাল চোরাচালানের সাথে জড়িত কাউকে রেহায় দেব না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (অপারেশন) মহসিন হোসেন জানান, মামলা রেকর্ড হওয়ার পর আমরা পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। আশা করি চাল পাচারের সাথে জড়িত কেও ছাড় পাবে না। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও তদন্ত দলের প্রধান আসাদুল হক জানান, আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি শনিবার থেকে চাল পরিমাপ করছি। গুদামে ৫০ টন গম ও ১১’শ ৪৪ মেট্রিক টন চাল মজুদ থাকার কথা। আমরা ৫ নং গুদামের চাল ও গমের ওজন শেষ করেছি। এখনো ২/৩ সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, পরিমাপ শেষ হলেই বোঝা যাবে কত টন চাল গম কম আছে।