বিপ্লব নাথ (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের পাশের দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরের চেনামুখ মউ’র দোকানের মউ আর বেঁচে নেই। স্বামীর শোকে ৮ ঘন্টার ব্যবধানে মারা গেলেন তার স্ত্রীও।
খবরটি গোটা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়েই আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়েই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কারণ, শিক্ষার্থীদের কাছে মউয়ের বানানো সিঙ্গারা, সমুচা, ছোলা, পেয়াঁজু, চপ ছিল জনপ্রিয়। দীর্ঘদিন এই দোকানের সুবাদে মউ তাদের প্রিয়জনে পরিণত হয়েছিলেন।
শুক্রবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান সবার প্রিয় মউ গুরা মিয়া। কিন্তু গুরা মিয়াকে কবর দিয়ে সবাই বাসায় ফিরতে না ফিরতেই স্বামীর শোকে অসুস্থ হয়ে মারা যান মউ’র স্ত্রী সুরা খাতুন।
মউ’র প্রকৃত নাম গুরা মিয়া সওদাগর। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত পরিচিত মুখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বরের পাশে মূল ফটকের দিকে যেতে একটু ডানে তাকালেই মিলতো ‘মউ’র দোকান। প্রায় ৭০ বছর বয়সী মউ শুক্রবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।
শুক্রবার বাদ আছর জানাযা শেষে ক্যাম্পাসের অদূরে বখতিয়ার ফকিরের মাজার এলাকায় চিরশায়িত হন গুরা মিয়া সওদাগর ‘মউ’। বিকেলে মউকে কবর দিয়ে সবাই বাসায় ফিরে এলে দেখতে পান মউর স্ত্রী সুরা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্বজনরা তাকে দ্রুত মদন হাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনিও মারা যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরা খাতুনকে মৃত ঘোষণা করেন। আজ শনিবার তাকে স্বামীর কবরের পাশে দাফন করা হবে, স্বজনরা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে মউয়ের বানানো সিঙ্গারা, সমুচা, ছোলা, পেয়াঁজু, চপ ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার বানানো এসব নাস্তা না খেলে শিক্ষার্থীদের যেন সে দিনটিই মাটি হয়ে যেত। তিনি শুধু নাস্তাই বানাতেন না, তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে ছিলেন ছায়ার মত। ইতিহাসের সাক্ষী এ মউ অতি যতেœ শিক্ষার্থীদের শুনিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তনের ইতিহাস। যদিও তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন, ছিলেন না কর্মচারীও। স্বাধীনতার পর পরই তিনি এখানে দোকান বসান। শুরু থেকে তাকে মউ বলেই ডাকতো শিক্ষার্থীরা। সেই থেকে নিজের দোকানের নামও দেন ‘মউর দোয়ান’।
একই দিনে মউ ও তার স্ত্রীর মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের হতবাক করেছে।