নিউজ ডেস্ক:ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধানহাড়িয়া গ্রামের লিপু লস্কর। বয়স ৩০ বছর। অল্পশিক্ষিত যুবক, আগে অন্যের জমি বর্গা ও লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী, সন্তান ও মাকে নিয়ে ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। ২০১৭ সালে ঝিনাইদহ মুখ ও বধির আবাসিক স্কুলের নিরাপত্তা প্রহরীর নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। চুক্তিভিত্তিক চাকরিও হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের পর ঠিকাদার গাফফারকে দিতে হয়েছিল তিন লাখ টাকা ঘুষ। লিপু লস্কর ভেবেছিলেন কষ্টের দিন বোধয় কেটে গেছে। প্রতি মাসে যা বেতন পাচ্ছিলেন, তাতে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু এক বছর যেতেই শুরু হলো মানবেতর জীবনযাপন। ঠিকাদার গাফফার পরবর্তী বছরে আবারও দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দিলে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। বিনা বেতনে এক বছর চাকরি করতে হয়েছে লিপু লস্করের মতো আরও ছয়জনকে।
তাঁরা হলেন নিরাপত্তা কর্মী চুয়াডাঙ্গার মাহফুজুর রহমান, অফিস সহায়ক ফরিদপুরের মিন্টু মাতব্বর, মালী ঝিনাইদহের হাবিবুর রহমান, বাবুর্চি কালীগঞ্জের মনির হোসেন, মমিনুর রহমান ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী ঝিনাইদহ সদরের মহিষাকু-ু গ্রামের কুলছুম বেগম। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে এদের বাদ দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই সাত কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
ভুক্তভোগী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নিয়োগে কোনো সময় বেধে দেওয়া ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো নোটিশ ছাড়ায় আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এতে আমার পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করেছি।’ আরেক ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাই। নইলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। এ ছাড়াও আমরা এক বছর কাজ করেছি। যার বেতন আজও পায়নি।’
এ ব্যাপারে গাফফার সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল গাফফারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্ট করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঝিনাইদহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের চাকরি ছিল এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ। অতিরিক্ত যে এক বছর কাজ করেছেন এটা ঠিকাদারের বিষয়।