মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন যোগদান করার পর থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারী বীজ ও সার সরবরাহ করে আসছেন। এছাড়াও কৃষকদের নামে ভুয়া প্রদর্শনী প্লটের নামে প্রকল্প দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গাংনী উপজেলায় সরকারী প্রণোদনা হিসাবে খরিপ ২/ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ২ হাজার কৃষকদের জন্য সরকারী ভাবে গ্রীষ্মকালীন পিয়াজের বীজ ও ১ হাজার কৃষকের জন্য মাসকলাই বীজ বরাদ্দ পেয়েছেন কৃষি অফিস। জনপ্রতি ১ কেজি করে পেঁয়াজের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার।
এছাড়াও ১ হাজার কৃষকের জন্য মাসকলাই বীজ ও সার বরাদ্দ পেয়েছেন। কৃষক জনপ্রতি মাসকলাই বীজ ৫কেজি, ১০ কেজি ডিএপি সার, ৫ কেজি এমওপি সার বরাদ্দ পেয়েছেন। সেখানে উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন প্রকৃত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ না করে ভূয়া কৃষকদের নামের তালিকা করে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, যাদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ করেছেন তারা কেউ প্রকৃত চাষী না।
যাদের মাঝে পেয়াজের বীজ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে বেশীরভাগ কৃষক পেঁয়াজ বীজ বপন না করে বীজ ও সার বাইরে বিক্রয় করেছেন। স্থানীয়রা জানান, গাংনী উপজেলায় প্রায় ২৮ জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। সবাই গাংনী উপজেলার বাসিন্দা ও কৃষি অফিসে ৩০বছর যাবৎ কর্মরত থেকে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অফিস পরিচালনা করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রদর্শনীতে নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করে চাষিদের সাথে প্রতারণা করেছে।
কৃষি অফিসের উপসহকারি ২৮জন কর্মকর্তা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বিএডিসি কর্তৃক নতুন উন্নত জাতের বীজ দিয়ে প্রদর্শনী প্লট তৈরী কারার কথা থাকলেও, নিম্নমানের পুরানো বীজ চাষিদের মাঝে দিয়ে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া যায়। উপসহকারি কর্মকর্তাদের সকলের বাড়ী এই উপজেলায় হওয়ায় ইচ্ছে মত অফিসে আসেন ইচ্ছেমত বাড়ীতে যান। সঠিক সময় বীজ সরবরাহ না করায় ফলন বিপর্যয় হওয়ার আশংকা চাষিদের।
অফিস ফাঁকি দিয়ে সারাদিন চায়ের দোকানে আড্ডাদেন আর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা মাত্র চায়ের দোকানে বসে থাকেন। মাস শেষ হতে না হতে সরকারে টাকা বেতন নেন। ধর্মচাকী গ্রামের চাষী সাইফুল ইসলাম, লিটন মাহমুদ, শহিদুল ইসলাম, জানান, আমাদের গ্রামে যাদের মাঝে পেঁয়াজের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তারা কেউ চাষী না। সরকারী বীজ ও সার পাওয়ার সাথে সাথে বীজ ও সার বাইরে বিক্রয় করে দিয়েছে। আর মাসকলাই এর বীজ যাদের দিয়েছেন তারা কেউ কৃষক না, বীজ সময় মত না দিয়ে অসময়ে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছেন। ফলে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন কমে যাবে। প্রকৃত কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করা হলে গাংনী উপজেলায় পেঁয়াজের চাহিদা পুরণ হতো। কৃষক সাইফুল ইসলাম আরও জানান, আমি ২৫ বছরের মধ্যে আমাদের কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তাকে মাঠ তদারকি করতে দেখা যায়নি। আমাদের পরামর্শ দেননি।
`কৃষিবিদ আমাদের পরার্মশ প্রদান করলে আমাদের ধান ক্ষেত ও গম ক্ষেত বিনষ্ট হতো না। এধরনে কর্মকর্তা থাকার চেয়ে না থাকায় ভাল। এব্যাপারে গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের নিকট কৃষকদের নামের তালিকা চাইলে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র প্রান্ত্রিক কৃষকদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়নি। নামের তালিকা তৈরি না করে কিভাবে সরকারী বীজ ও সার বিতরণ করেছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অল্প সময়ে মধ্যে নামের তালিকা তৈরি করে আপনাদের দেওয়া হবে। তিনি অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে পরে বলেন, আপনাদের কোন তথ্য দেওয়া যাবেনা। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে তথ্য নিতে হবে।